বৈবাহিক ধর্ষণও একজন অপরিচিতের দ্বারা ধর্ষণের মতোই সমান ভয়ঙ্কর: মহিলা স্বরাজ

আমাদের ভারত, ১৩ মে: “বৈবাহিক ধর্ষণের ওপর দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের ওপর সমাজের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে মহিলাদের পক্ষ থেকে, পরিষ্কার প্রতিক্রিয়া আসা উচিৎ – বৈবাহিক ধর্ষণ একজন অপরিচিতের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার মতোই ভয়ংকর ঘটনা এবং ক্ষমার অযোগ্য দণ্ডনীয় অপরাধ।”

সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সুফিয়া খাতুন শুক্রবার বলেন, “এই বিষয়ে মহিলা স্বরাজের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে যে ভারতবর্ষের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় মহিলারা প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার এবং সেইজন্যে গার্হস্থ্য হিংসা ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারা সমাজের চাপে মুখ খুলতে পারে না। এই অবস্থায় বৈবাহিক ধর্ষণের ঘটনা থানায় রিপোর্ট করা দুরূহ ব্যাপার এবং যদিও কোনো মহিলা এইরকম দুঃসাহস দেখিয়ে থাকে তাহলে তার কোনো সমাধান না পাওয়াটাও আইনের শাসনের ব্যর্থতাকেই প্রমাণ করে।

মহিলা স্বরাজের মতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অদণ্ডনীয় অপরাধের পর্যায় ফেলাটা ব্রিটিশ যুগের ভাবনা যার ভিত্তি ভিক্টোরিয়ান পিতৃতন্ত্র আইন, যেখানে নারী ও পুরুষকে সমান চোখে দেখা হত না। বিবাহিত মহিলা সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন না এবং স্বামীর পরিচয়ে স্ত্রীকে পরিচিত হতে হতো “ডক্টরিন অফ কভেরচার” আইনের মাধ্যমে। এর অর্থ হলো স্বামীর রক্ষণাবেক্ষণে থাকার জন্য পত্নীকে কিছু শর্ত পালন করতে হবে। এছাড়াও বৈবাহিক ধর্ষণকে দণ্ডনীয় অপরাধের স্বীকৃতি না দেওয়াটা সংবিধানের ১৪ নং ধারাকে উলঙ্ঘন করা, যেখানে মহিলাদের বৈবাহিক অবস্থার উপরে বিভক্ত করা হয়েছে। একজন অবিবাহিত মহিলা ধর্ষিত হলে আইনের সাহায্য নিতে পারে কিন্তু একজন বিবাহিত মহিলা ঘরের ঘেরাটোপে ধর্ষিত হলে সেই অসম্মান মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। এটা বোঝা দরকার যে আর্থিক ও আইনি বাধার জন্য একজন বিবাহিত মহিলার পক্ষে এমন অসম্মানজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা দুরূহ – এই মতামত প্রকাশ করেছেন দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি শ্রী সাকধের। তার মতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার এক্সেপশন (যেখানে বৈবাহিক ধর্ষণকে বাদ দেওয়া হয়েছে) আসলে সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১ ধারার উলঙ্ঘন ও তা অবশ্যই খারিজ করা উচিত। বিচারপতি শ্রী সাকধের মহাশয়ের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানাচ্ছে মহিলা স্বরাজ।

বৈবাহিক ধর্ষণ ১০০ টি দেশে দণ্ডনীয় অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হয়। দুর্ভাগ্যবশত ভারত সেই ৩৬ টি দেশের মধ্যে পড়ে যেখানে এখনও এই অপরাধ দন্ডনীয় হিসেবে বিবেচিত হয় না। মহিলাদের বিরুদ্ধে সমস্ত ধরনের অন্যায়ের অবসানের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের গঠিত কমিটি (সি ই ডি এ ডব্লু) ২০১৩ সালে ভারত সরকারকে বৈবাহিক ধর্ষণকে দণ্ডনীয় ঘোষণা করার সুপারিশ করেছিল। ১৬ ডিসেম্বর,২০১২ নির্ভয়া কান্ডের জন্য সারা দেশ জুড়ে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জে এস ভার্মা কমিটিও একই সুপারিশ করেছিল।

মহিলা স্বরাজ বিশ্বাস করে বিবাহের ব্যাপারে দাম্পত্যের অধিকার চূড়ান্ত এবং তা অস্বীকার করলে সেটা অবশ্যই বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে কিন্তু এই অধিকারকে বিবাহের পরে যদি অবমাননাকর ধর্ষণের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয় তবে সেটি কখনো বৈধ হতে পারে না। দাম্পত্য জীবনে নারী পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা দাবি করে, সেই সম্মান নারীকে দেওয়া উচিত।

মহিলা স্বরাজ সমস্ত মহিলা সংগঠন মানবাধিকার সংগঠন সংসদ এবং বিচার বিভাগের সদস্যদের কাছে এই আইন পুনর্বিবেচনা করার আবেদন রাখছে এবং মহিলাদের মর্যাদা ও সুরক্ষাকে বাস্তবায়িত করার অঙ্গীকার চাইছে। বিবাহের মতো পবিত্র বন্ধনের মধ্যে নারীদের প্রতি পাশবিকতা শোভা পায় না এবং এই কাজকে সমর্থন করলে সেটা সমগ্র সমাজ ও পারিবারিক মূল্যবোধের পক্ষে ক্ষতিকারক। দিল্লি হাইকোর্টের পুনর্গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ বিবাহিত মেয়েদের অধিকারকে সুরক্ষিত করবে এবং বিবাহের নামে তার অমর্যাদার প্রতিকার করবে এই আশা রাখে মহিলা স্বরাজ।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *