কলকাতায় আবক্ষ মূর্তি বসল শহিদ গোপীনাথ সাহার

আমাদের ভারত, কলকাতা, ১ মার্চ: এক অমর স্বাধীনতা সংগ্রামীর মৃত্যুর শতবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠান শুরু হল বুধবার থেকে। কলকাতার ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে ‘বঙ্গীয় সাহা সমিতি’ (পশ্চিমবঙ্গ শুঁড়ি সমাজ) তাদের কার্যালয়ের সামনে গোপীনাথ সাহার আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন করল।

পরাধীন ভারতে কলকাতার নগরপাল চার্লস টেগার্টকে গুলি করে মারতে গিয়ে ভুল করে মেরে ফেলেছিলেন পাশে থাকা সাধারণ এক ইউরোপীয়, আর্নেস্ট ডে-কে। সেই অপরাধে ১৯২৪ সালের ১ মার্চ ফাঁসি হয়েছিল আঠারো বছর চার মাস বয়সী তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপীনাথ সাহার।

বঙ্গীয় সাহা সমিতির সম্পাদক সুবীর সাহা বললেন, “এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কতটা জানে গোপীনাথ সাহা সম্পর্কে? অথচ ওঁর মতো শহিদদের হাত ধরেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই ঠিক করেছি, গোপীনাথের মৃত্যু শতবর্ষ উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে অন্যান্য অনুষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর মূর্তিও বসানো হল। এ ভাবে আজকের প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে জানতে উৎসাহী হবে।”

১৯০৫-এর ৭ ডিসেম্বর বরানগরে জন্ম হয় গোপীনাথের। তাঁর বংশের লোকজন থাকেন শ্রীরামপুরের ক্ষেত্রমোহন সাহা স্ট্রিটে। চার্লস টেগার্টকে কী ভাবে গুলি করে মারার পরিকল্পনা করেছিলেন ওই তরুণ? গোপীনাথের ভাইপো জগবন্ধু সাহা বলেন, “বাবাদের মুখে শুনেছি, চার্লস টেগার্ট খুব অত্যাচারী পুলিশ কমিশনার ছিলেন। ‘বন্দেমাতরম’ শুনলেই বেত হাতে মারতে আসতেন।

টেগার্টকে মারার পরিকল্পনা করতে গিয়ে কাকা জানতে পারেন, তিনি সব সময়ে রক্ষী-পরিবৃত হয়ে থাকেন। অনেক দিন ধরে টেগার্টকে অনুসরণ করে কাকা দেখেন, ওঁকে একমাত্র ফাঁকা পাওয়া যায় প্রাতভ্রমণের সময়ে। তখন রক্ষী থাকেন না। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক দিন ভোরেই টেগার্টকে লক্ষ্য করে গুলি চালান কাকা।”

কিন্তু সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এক সাধারণ ইউরোপীয়ের গায়ে লাগে। তাঁর মৃত্যু হয়। জগবন্ধু বলেন, “আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে কাকার ফাঁসি হয়। হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে যান। তবে টেগার্টের বদলে গুলিতে এক নিরপরাধ ইউরোপীয় মারা যাওয়ায় কাকা আফশোস করেছিলেন।” সুবীর জানান, সুভাষচন্দ্র বসু থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন দাশ- সহ তখনকার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সকলেই ভালবাসতেন গোপীনাথকে। গোপীনাথ গ্রেফতার হওয়ার পরে সেই মামলা যখন চলছিল, তখন বাংলা সংবাদপত্রে নিয়মিত সেই মামলার বিবরণী লেখা হত। গোপীনাথের ফাঁসির পরে তাঁর দেহ পরিবারকে দেওয়া হয়নি।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী শশী পাঁজা, বিধায়ক তাপস রায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, স্মিতা বক্সি প্রমুখ। তাঁরা শহিদদের অবদানের কথা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *