পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (৫১)— প্রসঙ্গ নরেন্দ্রনাথ দত্ত

আমাদের ভারত, ১৫ জানুয়ারি: নরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রসঙ্গে (১৮৮৪-১৯৪৯) ‘বাংলাপিডিয়া’ লিখেছে, একজন জনহিতৈষী ও শ্রীকাইল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। নরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার অন্তর্গত শ্রীকাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ক্যাপ্টেন দত্ত নামে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা কৃষ্ণকুমার ছিলেন চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের সংস্কৃতের শিক্ষক। নরেন্দ্রনাথের তিন ভাই ছিলেন- কামিনীকুমার, সুরেন্দ্রনাথ ও দেবেন্দ্রনাথ। কামিনীকুমার দত্ত একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ছিলেন। পাকিস্তান আমলে তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন।

ধনপতিখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নরেন্দ্রনাথের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ১৯০৬ সালে তিনি প্রবেশিকা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯০৮ সালে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মাত্র ২৫০ টাকা সম্বল করে তিনি কলকাতা যান এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। রাতে খিদিরপুর ডকে কুলির কাজ করে তিনি তাঁর পড়ার খরচ জোগাতেন। তাঁর অধ্যবসায়ের কথা জানতে পেরে কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল ক্যালভার্ট তাঁকে আর্থিক সাহায্য দেন। ১৯১৫ সালে নরেন্দ্রনাথ এম.বি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যালভার্টের সুপারিশে তিনি ‘Indian Emergency War Service’ এ কমিশন লাভ করেন। একজন লেফটেন্যান্ট হিসেবে নরেন্দ্রনাথ ইঙ্গ-তুর্কি যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান এবং প্রধান মেডিকেল অফিসারের পদ লাভ করেন। ১৯২৫ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ‘Bengal Immunity’ নামে এক কেমিকেল কোম্পানিতে যোগদান করেন। পরবর্তী সময় তিনি এ কোম্পানির নির্বাহী পরিচালকের পদে অধিষ্ঠিত হন।

ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ ১৯৪১ সালে তাঁর নিজের গ্রাম শ্রীকাইলে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর নাম দেন বাণী পীঠ। এটি ছিল ত্রিপুরা জেলার (বৃহত্তর কুমিল্লা) দ্বিতীয় ফার্স্ট গ্রেড কলেজ। ১৯৪৯ সালে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।” [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]

পুরনো কলকাতার গল্প ফেসবুক গ্রুপে মহম্মদ সইফুল ইসলাম নিচের ছবিটি যুক্ত করে লিখেছেন, “আজ বলছি কুমিল্লার দত্ত পরিবারে কীর্তি পুরুষ ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্তের কথা….

পিতা কৃষ্ণ কুমার দত্ত ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। ভাই কামিনি কুমার দত্ত একজন বিখ্যাত আইনজীবী এবং বৃটিশ শাসনামলে মন্ত্রী ছিলেন। বলছি একসময় ত্রিপুরা তথা আজকের বাংলাদেশের কুমিল্লার কৃতি সন্তান নরেন্দ্র দত্তের কথা। ১৯১৫ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন এবং ক্যাপ্টেন পদে আসীন হন। যুদ্ধ শেষে তিনি বেঙ্গল ইউমিনিটি কোম্পানিতে চাকরি নেন এবং একসময় তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে আসীন হন।

শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক এই মানুষটি এক সময় প্রচুর অর্থের মালিক হলেও ছাত্র জীবনে তিনি মুদি দোকানের কর্মচারি এবং কুলির কাজ করেন। কুমিল্লায় লেখাপড়া করার সময় তিনি ময়নামতি থেকে সবজি কিনে এনে কুমিল্লা শহরে ফেরি করে বিক্রি করেন।

১৯৩৫ সালে তিনি সমাজসেবায় নিজেকে মনোনিবেশ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি নিজ গ্রাম শ্রীকাইলে তার পিতার নামে ‘কৃষ্ণ কুমার উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীকাইল কলেজ।

ছবিতে কুমিল্লা মুরাদনগরের অবস্থিত শ্রীকাইল কলেজ।

সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *