আমাদের ভারত, ১১ ফেব্রুয়ারি : বাংলা সাহিত্যের অনেক ঐতিহাসিক সৃষ্টির জন্ম হয়েছে এই বিউটি বোর্ডিং এর প্রাঙ্গনে। ১৯৪৯ সালে প্রহ্লাদ সাহা এবং তাঁর ভাই নলিনী মোহন সাহা তৎকালীন জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের কাছ থেকে ১১ কাঠা জমি নিয়ে তাতে গড়ে তোলেন এই বিউটি বোর্ডিং। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে বিউটির নামেই এর নামকরণ করা হয়।
শুরু থেকেই এখানে আড্ডা দিয়েছেন এদেশের প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিক, চিত্র পরিচালক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কিংবদন্তিরা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে এই ঐতিহাসিক স্থানে এসেছিলেন নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু ও পল্লীকবি জসিমউদ্দিন।
বিউটি বোর্ডিং বাড়িটি ছিল নিঃসন্তান জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে সেখানে ছিল সোনার বাংলা পত্রিকার অফিস। কবি শামসুর রহমানের প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয়েছিল এ পত্রিকায়। দেশভাগের সময় পত্রিকা অফিসটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়।
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বিউটি বোর্ডিংয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন প্রহ্লাদ চন্দ্ৰ সাহাসহ ১৭ জন।
পরবর্তীতে প্রহ্লাদ চন্দ্রের পরিবার ভারতে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে প্রহ্লাদ চন্দ্রের স্ত্রী শ্রীমতী প্রতিভা সাহা দুই ছেলে সমর সাহা ও তারক সাহাকে নিয়ে বিউটি বোর্ডিং আবার চালু করেন। বিউটি বোর্ডিংয়ের মুখর আড্ডা আগের মতো না থাকলেও খাবার ঘরে এখনও খদ্দেরের ভিড় লেগেই থাকে। নগরের ভোজনরসিকরা এখানে ছুটে আসেন। আর নিয়মিত খান পুরোনো ঢাকার বইয়ের মার্কেটের নানা শ্রেণির মানুষ।
সেখনকার খাবার আমার ভালো লেগেছে, বিশেষ করে মোহন বাবুর ব্যবহার ঠিক যেন উপন্যাসের একটি চমৎকার হোটেল চিত্র। ভাতের সাথে চাটনি ও দই বেশ সুস্বাদু। বিউটি বোর্ডিং এর জন্মলগ্ন থেকেই এখানে আড্ডা দিতেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চিত্রপরিচালক, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।এখানে যারা আড্ডার আসরে আসতেন তাঁদের মধ্যে আছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের অনেকেই। এখনও কিন্তু প্রতিদিন কোনও না কোনও কবি, সাহিত্যিক সেখানে যান। পুরান ঢাকার মাঝে এ যেন এক শান্তিপূর্ণ ও শান্ত একটি পরিবেশ।
সূত্র— ১) ওল্ড ঢাকা ইন নিউ লুক ফেসবুক গ্রুপ।
২) ভ্রান্তবিলাস ইন্সটাগ্রাম পার্সোনাল ব্লগ। সংকলন— অশোক সেনগুপ্ত।