পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (৮০) বিক্রমপুরের শেষ জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি

আমাদের ভারত, ২৮ মার্চ: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার আড়িয়ল বিল। আর এ বিলের ধারেই ভাগ্যকূলের বালাশুর গ্রামে যদুনাথ রায় বাহাদুর গড়ে তুলেছিলেন তাঁর জমিদার বাড়ি।

মনোমুগ্ধকর পুরোনো বাড়িটিতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে একই রকম দেখতে কারুকাজ সজ্জিত মুখোমুখি দুটি জরাজীর্ণ প্রাসাদ। আছে কাছারি ঘর, দুর্গা মন্দির, লক্ষ্মী-নারায়ণ জিউ মন্দির, কালী মন্দির। বিভিন্ন প্রজাতির দূর্লভ সব ফুল ও ফলজ গাছগাছালি। এক সময় এ বাড়িতে পূর্ণিমা তিথিতে খুব ঘটা করে পালন হতো রাস উৎসব। এখন সেইভাবে খুব ঘটা করে রাস উৎসব না হলেও আশ্বিন মাসে জাঁকজমক করে দুর্গা মন্দিরে দুর্গা পূজা হয়। প্রতিদিনই মন্দিরের পুজারী শাঁখ বাজিয়ে, প্রদীপ জ্বেলে পূজা অর্চনা করেন।  

বাড়িটির চারপাশ এক সময় রাতের আধাঁরে বিলের মাঝে আলোয় জলমল করত। প্রথা বিরোধী লেখক, ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ তাঁর লেখা এক প্রবন্ধে এ বাড়ি প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘বিলের ধারে প্যারিস শহর’। সবুজ গাছ গাছালিতে ঢাকা। সকাল-সন্ধ্যায় পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। তার মাঝে বিশাল বিশাল পুকুর। পুকুরের চারপাশেই শ্বেতপাথরে নির্মাণ করা শানবাঁধানো ঘাট। ঘাটের চারপাশের সিঁড়িগুলো পুকুরের মাঝখানে এসে একত্রে মিলিত হয়েছে। পুকুরগুলো খুব গভীর যার কারনে সব সময়ই থাকে অথৈ জল।

জমিদার যদুনাথ রায়ের এ বাড়ির স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়ণে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর, গেস্ট হাউজ। জাদুঘরের প্রথম তলায় দুইটি গ্যালারি করা হয়েছে। গ্যালারি দুইটির নামকরণ করা হয়েছে জমিদার যদুনাথ রায় ও বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। আর দ্বিতীয় তলায় করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা গ্যালারি।

বাড়িটিতে ঢুকেই পুকুরে দেখতে পাবেন বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নৌকা। তার মধ্যে শাম্পান নৌকাও দেখতে পাবেন পুকুরে ভাসানো। এটি জাদুঘরের প্রতীকী নৌকা।

আসুন একবার ঘুরে আসি মুন্সিগঞ্জ শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে অবস্থিত জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি। যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। বিক্রমপুর সমন্ধে অনেক অজানা তথ্য হয়তো এ জাদুঘরে ভ্রমণে এসে জানতে পারবেন।

কিভাবে আসবেন: ঢাকার গুলিস্তান থেকে শ্রীনগর হয়ে দোহারের উদ্দেশ্যে আরাম বাস ছাড়ে কিছুক্ষন পরপর। ভাড়া ৬৫ টাকা। এছাড়া ঢাকার পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতুর গোড়া থেকেও সেবা পরিবহনে করে যেতে পারেন। সময় লাগবে প্রায় দুই ঘন্টা। নামতে হবে শ্রীনগর পার হয়ে বালাশুর চৌরাস্তায়। এর পর রিকশা বা অটোবাইকে যাওয়া যাবে জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি অর্থাৎ বিক্রমপুর জাদুঘর। ভাড়া লাগবে মাত্র ২০ টাকা। খোলা থাকে শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পযর্ন্ত। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। আর শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর ২টা থেকে ৫টা পযর্ন্ত খোলা থাকে। কোনও প্রবেশ মূল্য নেই।

সূত্র— উজ্জ্বল দত্ত,
নিউজজি২৪।
মার্চ ১, ২০১৯।
ছবি— ‘ট্রোল বিক্রমপুর’ ফেসবুক গ্রুপ। সংকলন— অশোক সেনগুপ্ত।

One thought on “পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (৮০) বিক্রমপুরের শেষ জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি

  1. Shyamal sen says:

    খুব ভালো লাগলো কিন্তু বিক্রমপুর মালপদিয়া,তে একসময় ডক্টর বলহরি সেন এর মনসা মন্দির ছিল। বড় বড় পুকুর ছিল।বাড়ির নাম ছিল মনসাবাড়ী। জায়গার নাম ছিল ফেগুনাসার । সর্বশেষ সেখান থেকে ময়মনসিংহ জেলায় ওনারা চলে আসে। কিন্তু সেই ইতিহাস আমরা এখনে দেখতে পাইনি। আশাকরি পরবর্তীতে পাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *