হিলিতে সরকারি স্কুলের জায়গা দখল নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার! দিদির দূতের ভূমিকায় হতাশ প্রধান শিক্ষক

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৫ মার্চ: সরকারি স্কুলের জায়গা রাতারাতি বেদখল। লক্ষ লক্ষ টাকার কারবারে চলছে হাতবদলের ঘটনাও। স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের যোগসাজশেই চলছে এই কারবার বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ঘটনা জানিয়ে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। শুধু তাই নয়, দিদির দূতেরা স্কুলে গিয়েও মেটাতে পারেননি এই সমস্যা। আর যাকে ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হিলি ব্লকের বিনশিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের নওপাড়া এলাকায়। সরকারি স্কুলের জায়গা জোরপূর্বক দখল করার পরেও কেন প্রশাসন সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলো না তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, দিদির দূতেরাই বা এলাকায় গিয়ে কি করলো তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন? যদিও এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধির গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের বিনশিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৫২ সাল থেকেই শুরু হয় যে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন। প্রায় ছয় বিঘা জমির উপর অবস্থিত প্রাথমিক স্কুলটি। স্কুলের নিজস্ব ভবন ছাড়াও, আপার প্রাইমারি স্কুল ও ছেলে মেয়েদের খেলাধূলার জন্য একটি মাঠ রয়েছে। বহু প্রাচীন ওই স্কুলের ফাঁকা জায়গায় এলাকার মানুষের প্রয়োজনার্থে গড়ে ওঠে একটি অস্থায়ী বাজার। সপ্তাহে দুদিন যেখানে হাটও বসে। এলাকার মানুষের সুবিধার্থে ও স্কুলের অনুমতিক্রমে যে হাটটি একইভাবে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এলাকায়। অভিযোগ, সরকারি স্কুলের অধীনস্থ সেই অস্থায়ী হাটের জায়গা ক্রমশই বেদখল হয়ে চলেছে। নিমাই প্রামানিক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা রীতিমতো পাকাপোক্ত ভাবে বিল্ডিং নির্মাণ শুরু করতেই বিতর্কের সুত্রপাত ঘটে।

স্কুলের জায়গা দখল করে কিভাবে ঘর নির্মাণ করছেন তিনি? প্রধান শিক্ষকের এমন প্রশ্ন উঠতেই শুরু হয় উভয়ের মধ্যে বাদানুবাদ। এর পরেই বিডিও ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন নওপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ। তার অভিযোগ, স্কুলের সরকারি জায়গা শুধুমাত্র বেদখলই নয়, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হাতবদলও চলছে। যে ঘটনার পিছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক নেতাদের মদত রয়েছে। ঘটনার পিছনে তৃণমূল ও বিজেপি যে উভয়েই জড়িত রয়েছে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। এদিকে এমন ঘটনার খবর পেয়ে দিদির দুতেরা ওই স্কুলে হাজির হলেও কোন সমাধান সূত্র বের করতে পারেননি তারা। আর যার জেরে একপ্রকার অব্যাহতই রয়েছে সরকারি স্কুলের জায়গা দখল প্রক্রিয়া।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ বলেন, সরকারি স্কুলের জায়গা রাতারাতি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। টাকার বিনিময়ে চলছে হাত বদলও। ঘটনার পেছনে স্থানীয় নেতৃত্বদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিডিও ও চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ জানালেও কোন সুরাহা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা লিপি বর্মন বলেন, নেতাদের মদতেই স্কুলের সরকারি জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

হিলি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভঙ্কর মাহাত বলেন, প্রধান শিক্ষকের করা সমস্ত অভিযোগ সঠিক নয়। এক্ষেত্রে কিছুটা মানবিকতা দেখিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে যেন আর কোন দোকান ঘর এমনভাবে নির্মান না হয় সেদিকটার উপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।

হিলি ব্লকের বিডিও অমিত দেব মন্ডল জানিয়েছেন, সরকারি স্কুলের জায়গা দখল কোনভাবেই বরদাস্ত নয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *