আমাদের ভারত, ২৩ জুলাই:
২০১৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে গিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলে চিন যে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে সে বিষয়ে মালদ্বীপের মত দ্বীপরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিলেন মোদী। মোদীর এই কূটনৈতিক সতর্কীকরণ যে সফল হয়েছে, সেটা মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।
মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন বিপদের সময় সবার আগে পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। সেই জন্য তাদের দেশে ভারতবিরোধী কোনও কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে গত বুধবার ভারত সফরের দিল্লি পৌঁছেছেন মালদ্বীপের বিদেশ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদ।
সম্প্রতি মালদ্বীপে কর্মরত ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর কাজ শুরু করে সেখানকার কিছু সংবাদ মাধ্যম। সাউথ ব্লকের ধারণা এর পেছনে চিনের ষড়যন্ত্র রয়েছে। এরপরই মোদী সরকার মালদ্বীপের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টি নিয়ে। মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী বলেন, “বিপদের সময় সবার প্রথমে ভারত পাশে দাঁড়িয়েছে। দু’দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও মজবুত। মালদ্বীপের আগের সরকারের কিছু লোক ভারত বিরোধী কাজ চালাচ্ছে। যদিও তারা সংখ্যালঘু।” এছাড়াও তিনি বলেন, ভিয়েনা চুক্তি মেনে বিদেশি কূটনীতিবিদদের সুরক্ষা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করছে আমাদের সরকার। কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর নেপথ্যে বৃহৎ ষড়যন্ত্র রয়েছে।
ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপে তেমন কোনও বিশ্বমানের স্টেডিয়ামে নেই। তাই সেখানে বিশ্বমানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি করতে আর্থিক সাহায্য করছে ভারত। এছাড়া সেনা ও নৌবাহিনীর জন্য উন্নত মানের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরি করে দেবে ভারত সরকার। সুনামি সাইক্লোন সহ সামদ্রিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম খবর জানাতে ভারতের উদ্যোগে মালদ্বীপের উপকূলে উন্নত রাডার সিস্টেম বসানো হবে। পানীয় জলের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধে মালদ্বীপে সরকারি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কেরল, তামিলনাড়ুতে। আগামী কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্পগুলির কাজ চলবে। করোনা মোকাবিলাতেও ভারত মালদ্বীপের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এর ফলে ভারত মালদ্বীপের অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত এই দেশটিতে চিনা প্রভাব অনেকটাই খর্ব করতে সক্ষম হয়েছে নয়াদিল্লি। মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের পূর্বতন সরকার অর্থাৎ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ ইয়ামিন ভারত ও চিন দুই দেশকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে কাজ উদ্ধারের চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন মালদ্বীপে ভারত বিরোধী কাজকে কোনওভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি চিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বেজিং থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণও নিয়েছিলেন ইয়ামিন সরকার। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মালদ্বীপের নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছিল বেজিং। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের সাধারণ নির্বাচনে জয় লাভ করে মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টি। রাষ্ট্রপতি পদে বসেন ভারতপন্থী ৫৪ বছরের ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালাহ। এর ফলে ভারত মহাসাগরের বুকে মালদ্বীপে বিশাল নৌঘাঁটি বানানোর যে স্বপ্ন চিন দেখেছিল তা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।