যুদ্ধ-যুদ্ধ হাওয়া! লাদাখে সংঘাতের পরিস্থিতি, মুখোমুখি ভারত চিন সেনা, দোভাল- রাওয়াতের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে মোদী

আমাদের ভারত, ২৬ মে :করোনা আবহের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ হওয়া। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় মুখোমুখি ভারত-চিন সেনা। সংঘাতের পরিস্থিতি লাদাখে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত ও তিন সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

একদিকে ভারতের সেনা, আরেকদিকে চিনের সেনা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় পূর্ব লাদাখের কাছে একাধিক জায়গায় মুখোমুখি ভারত ও চিন। চরমে উত্তেজনা সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২০১৭ সালে ভারত চিন ভুটান সীমান্তে ডোকলামের এই রকম সংঘাতের পরিস্থিতি আর তৈরি হয়নি। কিন্তু এবারের চিনাসেনার তৎপরতা অন্যবারের থেকে একেবারেই অন্যরকম বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

লাদাখের প্যাংগং শো, গালওয়ান উপত্যাকায় চিন প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। খবর রয়েছে চিনা সেনা গালওয়ানে বাঙ্কার তৈরির চেষ্টা করছে। তবে ভারতও পালটা বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় একাধিক এলাকা নিয়ে ভারত চিনের মতভেদ রয়েছে। ফলে সেখানে প্রায়ই চিনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এবারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চীনা সেনা তৎপরতা যথেষ্ট উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেভাবে গালওয়ান উপত্যকাকে চিন টার্গেট করেছে তাতে অবশ্যই চিন্তা বেড়েছে। কারণ এই এলাকা নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে কোনও বিরোধ ছিল না আগে।
খবর, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চিনা সেনা ঢুকেছে। তার মধ্যে গালওয়ান উপতাকায় চিনা সেনা অনুপ্রবেশের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উপত্যাকার দারবুক, শায়ক ও দৌলত বেগ, ওল্ডি রোডে চিনা সেনার সংখ্যা প্রতি নিয়ত বেড়ে চলেছে। গত দুই সপ্তাহে এই গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনা ১০০ টিরও বেশি তাঁবু খাটিয়ে নিজেদের উপস্থিতি বুঝিয়েছে। ভারতীয় চৌকি কেএম–১২০-র পার্শ্ববর্তী অংশে রয়েছে চিনা সেনা।

তবে ভারতও পাল্টা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় নজরদারি চালাচ্ছে। চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে পূর্ব লাদাখের এই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে জানা গেছে। ওইদিন প্যাংগং শো এলাকায় চিনা সেনা জওয়ানের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষ মিলিয়ে ১০০ জন আহত হয়েছিল। এরপর ৯ মে সিকিমের নাকুলাপাসে সংঘর্ষে জড়ায় দু’দেশের সেনা। সিকিম লাগোয়া ভারত ও চিন সীমান্তে চিনা বায়ুসেনার চপারও ঢুকতে দেখা যায়।

ভারতের তরফে অভিযোগ করা হয়, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় সেনার নজরদারির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে চিনা সেনা। লাদাখ, সিকিমের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষার কজে বাধা পাচ্ছে ভারতীয় সেনা।

কিন্তু এতে চিনা সেনার তৎপরতা কমার বদলে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ-অফ-স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত ও সেনার তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিদেশ সচিবের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে সেনা তিন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।

জানা গেছে, ৫মে-র যে সংঘর্ষ হয়েছিল তারপর থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে ৬ বার বৈঠক হলেও কোনো কাজ হয়নি। ফলে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপই হয়ত এবারের এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দরকার হবে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *