
অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, কলকাতা, ৫ ফেব্রুয়ারি: “যে যেখানে আছেন, প্রাণ ভরে থাকুন। দয়া-ভালবাসার প্রত্যাশী না হয়ে পজিটিভ থাকুন।“ বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের পরদিন, রবিবার এই মন্তব্য করলেন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা সাংবাদিক কলকাতা দূরদর্শনের মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়।
২৯টি কেমো নিয়েও হতোদ্যম হননি মৌসুমী। রবিবার এসেছিলেন ময়দানে কাবাডি ক্লাবে কলকাতা প্রেস ক্লাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতায় মিউজিক্যাল চেয়ার বিভাগে পুরস্কারও পান। পরে ক্লাব চত্বরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শুরুতেই জীবনযুদ্ধে কতটা আত্মপ্রত্যয় রাখতে হয়, সমবেতদের তা বোঝাতে ক্লাবের সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক তাঁকে ডেকে নিলেন।
মৌসুমী বলেন, অসুস্থতার খবর যখন প্রথম পেলাম, অঙ্গীকার করেছিলাম যেভাবে হোক জিততে হবে। রেডিও জকি সোহিনী সেনগুপ্তকে দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ও ভয়ঙ্কর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছে। এই রোগ আগের চেয়ে অনেক বেশি ছড়িয়েছে। কিন্তু কেউ ভেঙে পড়বেন না। হৃদরোগে কিন্তু আরও বেশি মৃত্যু হয়। ১৬টা কেমো নেওয়ার পর চিকিৎসক জানালেন আমার ক্যান্সারটা খুব ‘অ্যাগ্রেসিভ’। এর বীজ ছড়িয়ে যায় পরিবারের অন্য সদস্যের মধ্যে। আমি পরিবারের ১১-তম সদস্য যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছি। সেই কারণে শুরু হল রোগের সঙ্গে ভিন্ন লড়াই। পর্যায়ক্রমে ১৩টি কেমো চলল। ১৫ মাসে ২০টি রেডিয়েশন।
মৌসুমী বলেন, ক্যান্সার এখন প্রায় ঘরে ঘরে কড়া নাড়ছে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা, ফাইভ জি-র মত আধুনিক প্রযুক্তির সম্মিলিত এই রোগের সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হবে একযোগে, মানসিক শক্তি নিয়ে। জীবন অনিত্য। এর মধ্যেই বাঁচতে হবে, লড়াই করতে হবে বুকভর্তি আশা নিয়ে। আমার পরম পাওনা প্রেস ক্লাব এভাবে আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
ক্লাবের সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক বলেন, “আমরা সাধ্যমত মৌসুমীর পাশে আছি। দীর্ঘকাল সংবাদ শিরোনামে ছিলেন ময়দানের ফুটবল তারকা গৌতম সরকার। তিনি বলেন, “ইচ্ছেশক্তি বলে একটা জিনিস আছে। এই শক্তিই সাধারণ মানুষের সঙ্গে সফল মানুষের পার্থক্য তৈরি করে দেয়। স্বামী বিবেকানন্দ শিষ্যদের বলেছিলেন, মৃত্যুর দিন অবধি কাজ করে যাবে। আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। দৈহিকভাবে যখন থাকব না, তখনও ধরে নেবে আমি পাশে আছি। মৌসুমীর ইচ্ছেশক্তির প্রশংসা করি। মনে হতাশার কোনও জায়গা রাখলে চলবে না। আমি পারি, পারব। এই বোধটাই আমাদের মধ্য জাগ্রত করতে হবে।”
গৌতমবাবু বলেন, “জীবনে দুঃখকষ্ট থাকবেই। ওগুলোকে গুরুত্ব দিলে চলবে না। দুঃখীদের পাশে যথাসাধ্য থাকা দরকার। সম্মিলিত ভালবাসা অনেকের মুখে হাসি ফোটাবে। এগিয়ে নিয়ে যাবে সমাজকে।“ তিনি এবং কিংশুক ছাড়াও ক্লাবের তিন প্রবীন সদস্য মহম্মদ আমানুল্লা, স্বপন মুখার্জি এবং রাজ মিঠুলিয়া গোলাপের চারা এবং স্মারক দিয়ে মৌসুমীর সুস্থতা কামনা করেন।