আমাদের ভারত, ৩১ মে : দেশ জুড়ে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রনে আসতে শুরু করলেও বিপদ বাড়াচ্ছে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। গোটা দেশে এই রোগে এখনও পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০০। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা গুজরাটে সর্বোচ্চ। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সঙ্গে হোয়াইট এবং ইয়েলো ফাঙ্গাসও এখন মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩০ মে, রবিবার পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, এরাজ্যেও এই সংক্রমনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন, মৃত ৩ জন। তাছাড়াও বাঁকুড়া,দুই বর্ধমান, কলকাতা, উঃ ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি ৩৩ জন এই সংক্রমনে আক্রান্ত হিসাবে অনুমান করা হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, মিউকরমাইকোসিস বিরল হলেও নতুন কোনও রোগ নয়, এটি আমাদের আশে পাশে মাটি, গাছ, পচে যাওয়া ফল সব্জিতে থাকে। এই ফাঙ্গাস নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রমনে বাধা দেয়। তবে বর্তমানে কোভিড থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। কোভিড ছাড়াও এইচআইভি, ডায়াবেটিক, অর্গ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্ট, ক্যান্সারের মত রোগী, যাদের চিকিৎসার জন্য স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে তাদের ওপর এই রোগের প্রকোপ বেশি পড়েছে। স্টেরয়েড রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বাড়িয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও দূর্বল করে দেয়, সেই সুযোগ নিয়েই মিউকরমাইকোসিস শরীরে বাসা বাঁধে এবং নাক, চোখ, মস্তিষ্ক, চামড়া এমনকি পাচনতন্ত্রও নষ্ট করে দেয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
বর্ধিত এই সংক্রমনের বিপদকে নজরে রেখে গত ৯ মে কেন্দ্র সরকার নোটিশ জারি করে সমস্ত রাজ্যগুলিকে সচেতন করে এবং সংক্রমনের স্ক্রিনিং, ডাইগোনেসিস, ম্যানেজমেন্ট- এর নির্দেশ দেয়। ইতিমধ্যে রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে। পশ্চিমবঙ্গ এটাকে নোটিফায়েড ডিসিস ঘোষণা করেছে।
এই রোগে দুই ধরনের অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধের ব্যবহার হচ্ছে। একটি হল লিম্পোসোমাল এম্ফোটারিসিন, অপরটি লিপিড কমপ্লেক্স। ইতিমধ্যেই চিকিৎসার জন্য ইউ.এস থেকে ওষুধের ২ লক্ষ্য ডোজ আমদানি করা হয়েছে। প্রথম ওষুধের মূল্য শিশি প্রতি ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দ্বিতীয়টির মূল্য শিশি প্রতি ২ হাজার টাকা। প্রতিটি আক্রান্তের জন্য ৪২ দিন বা ৬ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ টি শিশির প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। স্পষ্টতই স্বল্প আয়ের মানুষেদের পক্ষে এই চিকিৎসা চালানো এবং সুস্থ হয়ে ওঠা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ ও কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই রোগের সংক্রমন প্রতিরোধে সতর্কতা ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।