রাজেন রায়, কলকাতা, ২ জুলাই: মাসখানেক আগে ১০ জুন গড়িয়া শ্মশানে আঁকশি লাগিয়ে ১৪টি মৃতদেহ টেনে তোলার সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় শিউড়ে উঠেছিল রাজ্যবাসী। মৃতদেহের প্রতি ওই অমানবিক আচরণের খবর পেয়ে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে বলার জন্য সময় নষ্ট করেননি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।
চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে কলকাতা পুরসভার প্রশাসককে তলব করে এ ব্যাপারে কৈফিয়ত চাওয়ার করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন তিনি। এবার গড়িয়া শশ্মান-কাণ্ডে রাজ্য সরকার, কলকাতা পুলিশ ও পুরসভার কাছ থেকে থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট চাইল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আর এই তথ্য পেয়েই বুধবার রাতে উচ্ছ্বসিত ট্যুইট করলেন রাজ্যপাল।
জানা গিয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন জনৈক আইনজীবী বিপুল চট্টোপাধ্যায়। গত ১৭ জুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে এই বিষয়ে অভিযোগ জমা করেন। ওই দিন গড়িয়া শ্মশানে ১৩ থেকে ১৪ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির মৃতদেহ অত্যন্ত অমানবিক ও দায়িত্বহীনভাবে সৎকার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যসচিব, কলকাতা পুর কমিশনার ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
গড়িয়া মহাশ্মশানে পচাগলা দেহ আঁকশিতে করে টানার ভয়াবহ দৃশ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। জনৈক বিপুল চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন।@MamataOfficial এর মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে।(1/2)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) July 1, 2020
আর এই পরেই বুধবার রাতে রাজ্যপাল ট্যুইট করে বলেন, গড়িয়া মহাশ্মশানে পচাগলা দেহ আঁকশিতে করে টানার ভয়াবহ দৃশ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। জনৈক বিপুল চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে। সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন, পুলিশি সন্ত্রাস, দুর্নীতি কাণ্ডে এবার আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্য প্রশাসনের যে সব অফিসার রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করছেন, তাঁদের আইনের সামনে দাঁড়াতে হবে। মহামূল্যবান গণতন্ত্র রক্ষায় কোনও সমঝোতা নয়।
সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন, পুলিশি সন্ত্রাস, দুর্নীতি কাণ্ডে এবার আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। @MamataOfficial এর যে সব অফিসার রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করছেন তাঁদের আইনের সামনে দাঁড়াতে হবে। মহামূল্যবান গণতন্ত্র রক্ষায় কোনও সমঝোতা নয়।(2/2)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) July 1, 2020
প্রসঙ্গত, স্থানীয়রা ওই মৃতদেহগুলি করোনা আক্রান্তদের বলে দাবি করলেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও কলকাতা পুরসভা জানিয়েছিল, গড়িয়া লাশ-কাণ্ডের সঙ্গে করোনা সংক্রমণের কোনও যোগ নেই। ঠিকাদার সংস্থাকে শো-কজ করা হয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রামিত হোন বা না হোন, পশুর মতো ওভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া অমানবিক বলে দাবি করে রাজ্যপাল বলেন, ‘ওই মৃতদেহগুলি কোভিড আক্রান্তদের কিনা সেটা আসল প্রশ্ন নয়। সেটা তো প্রমাণ সাপেক্ষ। আসল বিষয় হল, মৃতদেহ কি ওভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়! পশুদের সঙ্গেও ওরকম কেউ করে না। এই ঘটনাকে খাটো করে দেখাতে যাঁরা নানান কথা বলছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করছি, ভেবে দেখুন তো ওঁরা কেউ যদি আপনার কাছের কেউ হত? নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন।’ এবার রাজ্যের কাছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জবাব তলবে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি রাজ্যপাল। ট্যুইটে যেন দেখা গিয়েছে তাঁরই প্রতিফলন।