‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে মমতার নিদানে ক্ষোভ নেটানাগরিকদের

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, কলকাতা, ১৭ মার্চ: ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ইস্যুতে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করেই ছবিটিকে এক হাত নিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বিধানসভায় স্বরাষ্ট্র দফতরের বাজেটে তিনি বলেন, ‘কেউ সিনেমা দেখতে যাবেন না। ভাইরাল ভিডিয়োও দেখবেন না। সিনেমা যা দেখায় তা কখনওই সত্যি নয়। তাই সেগুলো বিশ্বাস করবেন না। এগুলো সব বানানো। সিনেমা সিনেমাই। কোনও দিন সত্যি হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওদের অনেক টাকা। তাই খরচা করে এসব বানায়। দেখবেন না। বিশ্বাসও করবেন না।’

বৃহস্পতিবার ক’টি সংবাদ পোর্টালে এই খবর প্রকাশের তিন ঘন্টার মধ্যে সহস্রাধিক মন্তব্য এসেছে। এর প্রায় সবই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা।

সুমনা ভট্টাচার্য লিখেছেন, “এইরকম একটি পরামর্শ আসবে জেনেই, যাদের দেখার, তারা প্রথম দিন থেকেই দেখতে শুরু করে দিয়েছে। রাজ্যবাসীকে মনে করিয়ে দিই, একসময় কিন্তু উনি এবিপি আনন্দ না দেখার এবং আনন্দবাজার পত্রিকা না পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।“

চন্দন মন্ডল লিখেছেন, “দ্য কাশ্মীর ফাইলস, মুভি বাংলায় ভাষান্তর করে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় এবং মোড়ে মোড়ে দেখানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।“ অঞ্জন ব্যানার্জি লিখেছেন, “গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং, নোয়াখালি গণহত্যা আর অক্টোবর’২১-এ কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ছবি হোক।“

সুজিত পোদ্দার লিখেছেন, “এই ভাষণ দুর্নীতিপূর্ণ রাজ্যের অতি দরকার। যতই বারণ করবে জনগন ততই উৎসুক হয়ে ছোটাছুটি করবে দেখার জন্য।“ দীপক সাহা লিখেছেন, “খুব ভয় পেয়েছেন দিদিমণি। অপ্রিয় সত্য কথা এতদিন চাপা ছিল এখন সামনে এসে গেছে তাই। সত্যকে অস্বীকার করা যায় না মেরুদন্ড সোজা রেখে নিরপেক্ষ ভাবে সিনেমাটা দেখার অনুরোধ করছি।“

বিনয় সরকার লিখেছেন, “যাই হোক আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা এই ছবির একটু হলেও তো প্রচার করা হলো। তবে সেটা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ জয় হিন্দ, জয় বাংলা, জয় শ্রী রাম।”

সুশান্ত আঢ্য লিখেছেন, “সিনেমাটি তৈরি করার জন্য অনুপম খের কাশ্মীর পন্ডিত হয়ে যে লড়াই করেছে তাকে সাধুবাদ জানাই। আর আমাদের টলিউড অভিনেতা, অভিনেত্রীরা ও পরিচালকরা আজ পর্যন্ত কোনও ভাবনা চিন্তা করতে পারল না। ঘিন্না লাগে এদের দেখে।“

বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “এটা কাশ্মীর ফাইলস না হয়ে গুজরাট হত তখনও কি একই কথা বলতেন? ভারতের নাগরিকদের সংবিধান অনুযায়ী যে সুযোগ সুবিধা দিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে একজন নাগরিক কি করবেন না করবেন সেটা তার ইচ্ছা। তার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার কারুর নেই। চিত্রটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে।“

দীপক দে লিখেছেন, “সত্যকে চেপে রাখা মুর্খতার পরিচয়। সত্য ঠিক সূর্যের আলোর মত, একদিন ঠিক প্রকাশ হয়ে যায়। বাংলা, সিন্ধ ও পঞ্জাবের ঘটনাবলী নিয়ে সিনেমা হওয়া উচিত। লোকে জানুক নেহেরু, গান্ধী ও কংগ্রেসের কেচ্ছা।“

কমলিকা দাস লিখেছেন, “আমাদের সরকার তো প্রতিশ্রুতি বদ্ধ, উন্নয়ন করবেন, পশ্চিমবঙ্গকে দ্বিতীয় কাশ্মীরে পরিনত করবেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই ছিল তার প্রথম প্রতিশ্রুতি। শুধু অপেক্ষায় আছি,‌ দিন খুব কাছে। দ্বিতীয় কাশ্মীর পশ্চিমবঙ্গ হওয়াতে।

নন্দদুলাল দাস লিখেছেন, “যখন মুখ্যমন্ত্রী এই ছবি দেখতে নিষেধ করছে তারমানে কোথাও কিছু একটা আছে। তাই এই সিনেমাটি দেখতে হবে। আর পুরো দেশের ভিতরে এই খবরটা ছড়িয়ে দিতে হবে যে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া এই সিনেমাটা দেখতে নিষেধ করছে, বেশ কেল্লা ফতে।“

অসীম চক্রবর্তী লিখেছেন, “সিনেমাটি আমি অবশ্যই দেখবো। এই ধরনের সিনেমা হওয়া খুব প্রয়োজন ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে একমত নই। তার পরেও বলবো মুখ্যমন্ত্রী দুটো সঠিক কথা বলেছেন। ১) কর মুকুব করা সরকারের একেবারেই উচিত হয়নি। অহেতুক রাজনীতির রঙ লাগিয়ে ফিল্মের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতি করা হচ্ছে। সরকারের কাজ প্রচার নয়। ওটা ফিল্ম মেকার্সদের কাজ। তারা করেছেন। পন্ডিতদের যথাযথ পুনর্বাসন করাই সরকারের কাজ। ২) এই ফিল্মটি নিয়ে দৃষ্টিকটু রকমের মাতামাতি করা হচ্ছে। দাঙ্গা লাগার যে আশঙ্কা মুখ্যমন্ত্রী করছেন তা মিথ্যা নয়। কোনো কোনো রাজ্যে হতেই পারে। তা যদি হয়, এই ফিল্মটিকে সারা বিশ্বের লোক ভাববে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক অস্ত্র এবং মিথ্যাচার। কাশ্মীরী পন্ডিতদের উপর হওয়া অত্যাচার এবং তার প্রতিকারের বিষয় পিছনে চলে গিয়ে নিষ্ফলা রাজনীতিটাই প্রধান হয়ে উঠে আসবে।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *