কৃষিকার্যের সূচনায় কুড়মি সম্প্রদায়ের নববর্ষ উদযাপন

জে মাহাতো, আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ১৫ জানুয়ারি: আজ কুড়মালি নববর্ষ। ২৭৭২ কুড়মাব্দ। ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী মাহাত কুড়মি সম্প্রদায় ১২মাসে বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক আচার অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন।সবগুলোই মূলত প্রকৃতি কেন্দ্রিক। নববর্ষের এই প্রথম দিনটিকে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ খুবই শুভদিন হিসেবে গণ‍্য করেন, তাই এই দিনে বিভিন্ন শুভকাজ শুরু করা হয়। 

পৌষ সংক্রান্তিতে মকর পরবে পিঠে পুলি খেয়ে টুসু ভাসিয়ে বছর শেষ হয়েছে। আজ সূর্য দক্ষিণায়ণ থেকে উত্তরায়ণ যাত্রা শুরু করে অর্থাৎ অক্ষায়ণ হয়। এই অক্ষায়ণ থেকেই পালিত হয় “আইখ‍্যান যাত্রা”। আদিবাসী কুড়মি সম্প্রদায় প্রকৃতির পুজারী। তাদের জীবনযাত্রা একেবারেই কৃষিভিত্তিক। তাই মূলত: কৃষি কাজের সূচনা করা হয় এই আখ‍্যান যাত্রার দিনে, যাকে বলা হয় হালচার বা হালপুইন‍্যা। এদিন সকালে সারা বাড়ি গোবর জলে লাতা দিয়ে পরিস্কার করে স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে গরু বা মোষকে লাঙ্গল জুড়ে জমিতে আড়াই পাক লাঙ্গল করা হয়। এই সময়
স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে  বরণ উপাচার হাতে অপেক্ষা করেন গৃহবধূরা। তারা নাঙ্গল টানা গরু-মহিষদের পা ধুইয়ে সিঙে তেল সিন্দুর মাখিয়ে বরণ করার পর যত্ন সহকারে বেতের তৈরী ঝুড়িতে খাবার খেতে দেন। এভাবেই কৃষিকাজের শুভসূচনা করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ। 

জঙ্গলমহলের পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলা ছাড়াও ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং অসম অর্থাৎ সমগ্র ছোটনাগপুরের কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ এই রীতি পালন করে থাকেন।

পেশায় শিক্ষক,আদিবাসী কুড়মি যুবক বিপ্লব মাহাত বলেন, আমরা ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসী, প্রকৃতির পূজারী। প্রকৃতিরই একটা অংশ কৃষি। কৃষক ছাড়া আমাদের অন্ন যোগানোর বিকল্প নেই। আমাদের জীবন যাপন কৃষি ভিত্তিক। তাই এই কুড়মাব্দের প্রথম দিনটিকে আমরা শুভদিন হিসাবে গণ্য করে এই দিনই কৃষি কার্যের সূচনা করে থাকি। তাছাড়াও আজকের এই শুভ দিনে বিভিন্ন জায়গায় গ্রামের গরাম ঠাকুরের পূজাও হয়। তিনি গ্রামের সবার মঙ্গল করেন বলে মনে করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *