স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ২৬ জুন: বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে জমানো জিনিসপত্র কিনে এনে ওরা সেগুলি বিক্রি করত ভাংরি মালিকদের কাছে। কিন্তু এখন করোনা আতঙ্কে বাড়িওয়ালা আর তাদের বাড়িতে ডাকছেন না ভয়ে। ভ্যানে করে বা ঠেলায় করে আবার কেউ কাঁধে চটের বস্তা নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহর থেকে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বেশিরভাগ দিনই বাড়িতে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ওদের। ফলে সমস্যায় পড়েছে রায়গঞ্জ শহরের প্রায় ৪৫০০-৫০০০ হাজার ভাংরিয়ালা থেকে শুরু করে ভাংরি গুদামের মালিকেরা।
রায়গঞ্জ শহরের প্রায় ভাংরি গুদাম রয়েছে প্রায় ১৫০টি। এই ভাংরির সাথে যুক্ত আছেন প্রায় ৪৫০০-৫০০০ হাজার ভাংরিয়ালা। পরিবারের সদস্যদের দুমুঠো খাবার যোগান দিতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহর থেকে গ্রাম বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুরনো বই, পেপার, খাতা, কার্টুন সহ বাড়িতে ভেঙ্গে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে বেরিয়ে পরেন তারা। লকডাউনের আগে দিন গেলে ২০০-৩০০ টাকা রোজগার হত। কিন্তু বর্তমানে দেশ জুড়ে করোনা সংক্রমণের ফলে বাড়িওয়ালারা বাড়িতে আর তাদের ডাকছেন না পুরনো বই, খাতা, পেপার সহ অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার জন্য। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছে ভাংরিয়ালারা।
এক ভাংরিয়ালা জানিয়েছেন, কয়েক মাস লকডাউনের ফলে বাড়িতে বসেই ছিলাম। কোনও রোজগার হয়নি। সরাসরি সাহায্য পেয়েছিলাম তা দিয়ে কয়েক দিন চালিয়েছি সংসার। পরের দিকে জমানো টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়েছে। লকডাউন খোলার পরে ভেবে ছিলাম এত দিনে মানুষের বাড়িতে অনেক জিনিসপত্র জমে গেছে তারা বিক্রি করবে। কিন্তু শহরে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে দেখা গেল কেউ আর বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। জিনিসপত্র বিক্রি তো দুরের কথা। সারাদিন ঘুরে ঘুরে দিনের শেষে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন সংসার চালাতে পারবো বলতে পারছি না। আমার মতো এই কাজে যুক্ত বহু মানুষ বর্তমানে চরম সমস্যায় পরেছে। সরকারের কাছে আবেদন আমাদের দিকটা একটু দেখুন, না হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে বলে জানান তারা।
ভাংরি গুদামের মালিক রাজু মোহন্ত জানিয়েছেন, লকডাউনের আগে ভালোই ব্যবসা চলছিল। কিন্তু এখন দোকান ভাড়া ও কর্মীর বেতন দিতে পারছি না। যারা আমাদের কাছে পুরনো জিনিসপত্র নিয়ে আসত তারা এখন আর আসছে না। কারন করোনার আতঙ্কে মানুষ তাদের বাড়িতে ডাকছে না। মানুষ ভয় পাচ্ছে। পাশাপাশি গাড়িঘোড়া না পাওয়ার জন্য আমি আমার জিনিসপত্র বাইরে পাঠাতে পাচ্ছি না। তার মধ্যে দাম কমে গিয়েছে। আগে পুরনো লোহার জিনিসপত্রে দাম ছিল ১৮-২০ টাকা কেজি আর প্লাস্টিকের জিনিসপত্র দাম ছিল ১২-১৫ টাকা। কিন্তু এখন তা দাঁড়িয়েছে লোহার জিনিসপত্রে দাম হয়েছে ১৪-১৫ টাকা কেজি আর প্লাস্টিকের জিনিসপত্র দাম ছিল ৮-১০ টাকা। ফলে চরম সমস্যায় পড়েতে হচ্ছে আমাদের কাজের সাথে যুক্ত থাকা মানুষেরা বলে জানান তিনি।