পঙ্গু গৃহবধূর অপুষ্ট বাচ্চাকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ওসি

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ৩০ মার্চ:
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রাম ভাজনঘাট হালদার পাড়া। এক দম্পতি ৩ সন্তানকে নিয়ে কুঁড়ে ঘরে কোনো রকমে দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ একটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান গৃহবধূ। দাঁড়ানোর ক্ষমতা তার আর নেই। হামাগুড়ি তার এখন চলার সঙ্গি। ঘরে একটি অপুষ্টি জনিত রোগে ভুগছে একমাত্র পুত্র। অভাবের সংসারে স্বামী সংসার চালানোর তাগিদেই গৃহবধূকে কুড়ে ঘরে রেখে পাড়ি দিলেন ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে। বিগত দু-তিন মাস ধরে তার স্বামী ভিন রাজ্যের কর্মস্থল থেকে টাকা পাঠাতে পারছেন না। তিন সন্তান নিয়ে কার্যত না খেতে পাওয়ার অবস্থা। করোনার লকডাউনের জেরে তাদের পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও সঙ্গীন। বেশ কিছুদিন দেড় বছরের ছোট্ট ছেলেটি পায়নি দুধ। খবরটি কানে পৌঁছেছিল নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি রাজ শেখর পালের। জানার পর থেকে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। রবিবার ওই পরিবারটিকে বাঁচানোর তাগিদে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন প্রচুর খাবার। ছোট্ট শিশুটির দুধের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি পরিবারটির পাশে দাঁড়াবেন।

কৃষ্ণগঞ্জ থানার ভাজনঘাটে বাড়ি গৃহবধূ সুদেষ্ণা হালদারের। স্বামী তপন হালদার। পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। কাজ করেন ভিন রাজ্যে। মাসে মাসে সংসার চালানোর জন্য পাঠাতেন কিছু টাকা। তা দিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাতেন সুদেষ্ণাদেবী। কিন্তু গত দু তিন মাস স্বামী টাকা পাঠাতে পারেননি। এমনিতেই চলছিল সংকট। করোনা তাদের পরিস্থিতিকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। সাত বছরের মেয়ে সোনালী, পাঁচ বছরের মেয়ে রুপালী ও দেড়  বছরের ছোট্ট সন্তান কৃষ্ণকে নিয়ে কার্যত অথৈ জলে পড়েছিলেন সুদেষ্ণা দেবী। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি,
বিডিও’র কাছে পৌঁছায়নি এই গৃহবধূর করুন আর্তনাদ।অনেকে জেনেও কান দেননি এই পরিবারের প্রতি। শেষ পর্যন্ত তাদের আর্তনাদ পৌছালো ওসির কাছে। সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কাছে ভগবান হয়ে দাঁড়ালেন রাজ শেখর পাল। সুদেষ্ণা দেবী জানিয়েছেন,’উনি আমাদের ভগবানের মতো পাশে দাঁড়ালেন। তার দান করা আহারেই আমাদের পরিবারের মুখে উঠলো অন্ন। শিশুর মুখে উঠলো দুধের বোতল।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ আলী মন্ডল বড়বাবুর এই কর্মকান্ডের প্রশংসা করলেন। তিনি জানালেন, আমরা কাছে থেকেও যা করতে পারিনি কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি তা করে দেখালেন। এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবী ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক স্বপন চক্রবর্তী ওসির এই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। এবং তিনি বললেন, এই ওসি একজন দক্ষ প্রশাসক ও সমাজ সেবীও বটে। হালদার পাড়ার প্রত্যেকটি নাগরিকের কাছে ওসি হয়ে উঠলেন ভগবান। শুদু এটাই নয় এর আগেও কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আবারও তিনি মানবিকতার নজির গড়লেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *