এক বিজেপি কর্মীকে অপহরণ করে খুন, নিখোঁজ আরও এক, রাতভর ময়না থানায় বিক্ষোভ, সকাল থেকে পথ অবরোধ

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর ২ মে: আবারও উত্তপ্ত ময়নার বাকচা পঞ্চায়েত এলাকা। সোমবার রাতে বাকচার গোড়ামহল এলাকায় এক বিজেপি নেতাকে অপহরণ করে পিটিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করার অভিযোগ উঠল শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মৃত বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া (৬০) বিজেপির বুথ কমিটির সভাপতি। এছাড়াও সঞ্জয় তাঁতি নামের আরও এক বিজেপি কর্মীকে অপহরব করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এর পাশাপাশি রাতভর গোড়ামহল এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি চলে। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাতভর ময়না থানা ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতা কর্মীরা। আজ সকাল থেকে বিজেপি তরফে ময়নার বাইপাসে তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থান-বিক্ষোভ ও টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন তারা এর জেরে নতুন করে উত্তেজনায় ফুটছে বাকচা এলাকা।

বিজেপির দাবি, সোমবার বিকেল প্রায় ৫টা নাগাদ স্ত্রী ও পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে নির্ণীয়মান বাড়ির সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন বিজয়কৃষ্ণবাবু। সেই সময় পথে একদল তৃণমূল কর্মী তাঁদের ওপর হামলা চালায়। দুষ্কৃতীরা বিজয়কৃষ্ণকে বেধড়ক মারতে শুরু করে। স্ত্রী ও পুত্র বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারধর করতে থাকে। এই সময় চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা বিজয়কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে চলে যায়। তৎক্ষনাৎ স্থাণীয়রা ঘটনাটি পুলিশকে জানালেও তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পরে রাতের দিকে বিজয়কৃষ্ণের মৃতদেহ তমলুক হাসপাতালে পাওয়া যায়। ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দার অভিযোগ, “বিজয়কৃষ্ণকে অপহরণ করা হলেও পরে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ তমলুক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। অথচ মৃতের পরিবারকে এ বিষয়ে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। গোটা ঘটনায় রহস্য দানা বাঁধছে। কীভাবে দেহ পুলিশের কাছে গেল, অভিযুক্তদের কেন পাকড়াও করা হয়নি তা জানতে দরকার হলে আদালতে যাব,” বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অশোক দিন্দা।

রাতেই দলে দলে বিজেপি কর্মীরা ময়না থানার সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। অশোক দিন্দার অভিযোগ, “আমাদের আরও এক কর্মী সঞ্জয় তাঁতিকেও অপহরণ করা হয়েছে। তাঁকে মেরে ফেলা হতে পারে বলে আমরা আশংকা প্রকাশ করছি।” যদিও পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করেছে।

অশোক দিন্দার দাবি, “দুষ্কৃতীরা রাস্তায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেনি। গোড়ামহলে পুলিশের সামনেই রাতভর বোমাজি চলেছে।”


ছবি: নিহত বিজেপি নেতা বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া।

দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সকাল থেকে ময়নার বাইপাসে তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থান-বিক্ষোভে বসে বিজেপি নেতা কর্মীরা। বিধায়ক অশোক দিন্দার নেতৃত্বে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অশোক দিন্দার দাবি, যতক্ষণ না দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ, ততক্ষণ তাদের এই অবস্থান বিক্ষোভ চলবে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ।

গত বিধানসভা নির্বাচনে ময়নায় বিজেেপি প্রার্থী অশোক দিন্ডার জয়ী হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল বাকচা অঞ্চল। শুধুমাত্র এই অঞ্চলেই বিজেপি ১০ হাজারের বেশী ভোটে লিড পেয়েছিল। এরপর থেকে প্রায়শই রাজনৈতিক সংঘর্ষে খবরের শিরোনামে থাকে বাকচা এলাকা। খুন, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, হামলার জেরে সরগরম থাকে এই এলাকা। কয়েকমাস আগেই বাকচা থেকে বিপুল পরিমাণে বোমা উদ্ধার হয়েছে। সম্প্রতি উত্তেজনার আবহে ময়না থানার ওসি বদল করে আইসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সংঘর্ষে এখনও রাশ টানা যায়নি। যদিও গোটা ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে এলাকায় উত্তেজনা থাকায় বিপুল পরিমানে পুলিশে মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন হাজরার দাবি, “কয়েকদিন আগে গোরামহল গ্রামের বাসিন্দা স্বরস্বতী মন্ডলের বাড়িতে হামলা ও ভাঙ্গচুরেরে ঘটনায় ময়না থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সোমবার বিকেল নাগাদ বিজয়কৃষ্ণের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে। নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় বিজয়কৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এর পেছনে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *