জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১১ অক্টোবর: পুজোর মুখে উড়ালপুলের বেয়ারিং মেরামত। বন্ধ জাতীয় সড়কের একটি লেন। যানজট থেকে বাঁচতে উল্টো রুটে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় জখম হল এক যুবক। আর ওই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল দুর্গাপুরের মুচিপাড়া। বাসে ভাঙ্গচুর। জাতীয় সড়ক অবরোধ। সোমবার এই ঘটনাকে ঘিরে চরম উত্তেজনা ছড়াল। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামল বিশাল পুলিশ বাহিনী। কমব্যাট ফোর্স। ঘটনায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের গাফিলাতিকে দুষল বাস মালিক সমিতি।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ২ নং জাতীয় সড়কের দুর্গাপুর মুচিপাড়া উড়ালপুলের বেয়ারিং মেরামতির কাজ চলছে। তার জেরে ওই উড়ালপুলের বর্ধমান-আসানসোলগামী লেনে যান চলাচল বন্ধ। বিকল্প সার্ভিস লেন দিয়ে সমস্ত যানবাহন যাতায়াত করছে। সংকীর্ণ সার্ভিস লেনে যাতায়াতে যানজট শুরু হয়। ফলে গত কয়েকদিন ধরে নাকাল সাধারণ মানুষ। যানজট থেকে বাঁচতে বেশ কিছু যাত্রীবাহী বাস উল্টোরুটে যাতায়াত শুরু করে। আর তাতেই বিপত্তি। সোমবার সকালে কোলকাতা- আসানসোলগামী একটি ভলভো বাস উল্টো রুটে ঢুকে পড়ে। আর ওই বাসের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয় এক যুবক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে দুর্ঘটনার খবর চাউর হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী। কাতারে কাতারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে ক্ষিপ্ত জনতা। চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অবরোধ কাটিয়ে যাওয়ার সময় অবরোধকারীদের রোষে পড়ে একটি যাত্রীবাহি বাস। ক্ষিপ্ত জনতা বাসটি ভাঙ্গচুর করে। ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামে বিশাল পুলিশবাহিনী, কমব্যাট ফোর্স।
অবরোধকারীদের অভিযোগ, “পুজোর মুখে জাতীয় সড়কের মূল লেন বন্ধ করে মেরামতির কাজ করায় যানজট শুরু হয়। সপ্তাহ খানেক ধরে যানজটে নাকাল সাধারণ মানুষ। ট্রাফিক আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে উল্টো রুটে যাত্রীবাহী বাস বেপরোয়া যাওয়ার ফলে এদিনের দুর্ঘটনা।”
ক্ষিপ্ত জনতা প্রশ্ন তুলে বলেন,”জাতীয় সড়কে ট্রাফিক ব্যাবস্থা সম্পূর্ণ বেহাল। টোলগেটের কাছে কিভাবে উল্টো রুটে যানবাহন ঢুকে পড়ছে? ট্রাফিক পুলিশ কেন ব্যাবস্থা নেয়নি? এদিনের দুর্ঘটনার দায় সম্পূর্ণ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতা।”
এদিকে ঘন্টা তিনেকের অবরোধে যানজট চরম আকার নেয়। যানজটে যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স। প্রায় তিনঘন্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। দুর্গাপুর বাস মালিক সমিতির পক্ষে নিতাই বসাক জানান,”সড়ক সম্পূর্ণ না করে টোল আদায় করছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তারপরও আবার টোলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। সড়কে যান চলাচলে সুরক্ষা ব্যাবস্থায় সম্পূর্ণ উদাসীন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।” তিনি প্রশ্ন তুলে আরও বলেন,” পুজোর মুখে সড়কের ওপর উড়ালপুলের মেরামতি কেন? এক মাসে আগে কেন মেরামত করা হল না? গত একবছর ধরে সার্ভিস লেন বেহাল। টোল আদায় হচ্ছে অথচ বেহাল সার্ভিস লেন মেরামতে গাফিলাতি কেন?”
এদিন উল্টো রুটে বাস যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্ধমান -আসানসোল গুরুত্বপূর্ণ রুট। ১০-১৫ মিনিট অন্তর বাস। যানজটে আটকে পড়লে বাসের রুট ফেল হবে। ব্যাবসার লোকসান হবে। সময়ে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে উল্টো রুটে গিয়ে টাইম মেকআপ করতে হয়। এদিনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।”
যদিও জাতীয় সড়কের দুর্গাপুর আঞ্চলিক শাখার প্রজেক্ট ডিরেক্টর স্বপন কুমার মল্লিক জানান, “উড়ালপুলে মেরামতির কাজ শেষের মুখে। খুব শীঘ্রই লেনটি চালু হবে। সার্ভিস লেন সংস্কারের কাজ চলছে। বৃষ্টির জন্য সার্ভিস লেন সংস্কারের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। শীঘ্রই সার্ভিস লেন সংস্কারের কাজ শেষ হবে।”
অন্যদিকে এসিপি(পূর্ব) ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জি বলেন, “বাসটিকে আটক করা হয়েছে। কিভাবে দুর্ঘটনা হল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”