স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ২৩ মে: তৃণমূল নেতার স্ত্রী তথা দলের এক মহিলা কর্মীকে স্যোশাল মিডিয়ায় কুরুচিকর মন্তব্য ও আপত্তিকর ছবি-ভিডিও পাঠানোর অভিযোগ আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে। উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা ওই পরিবার জেলা নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসির অভিযোগ উঠছে। অপরদিকে “শর্ষের মধ্যেই ভুত” বলে কটাক্ষ বিজেপির। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল রাজনৈতিক চাঞ্চল্য উত্তর দিনাজপুরে।
বছর পঞ্চাশের ওই মহিলার অভিযোগ, তার স্বামী ইতিপূর্বে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির কালিয়াগঞ্জ শহর কমিটির সভাপতি ছিলেন। সেই সুত্রে বর্তমান আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি রায়গঞ্জের বাসিন্দা শেখর দাস তাদের পুর্ব পরিচিত। কয়েকবার কালিয়াগঞ্জের শিমুলতলায় তাদের বাড়িতেও গিয়েছেন শেখর দাস। তবে বয়স্কা মহিলা স্মার্ট ফোনে বা ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে বিশেষ পারদর্শী না হওয়ায় তার মেয়ে সেগুলিতে লক্ষ্য রাখত। মাস কয়েক আগে শেখর দাসের পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন করে তার অষ্টাদশী মেয়ে। এরপর কিছুদিন কথোপকথন চলতেই ম্যাসেঞ্জারে ওই মহিলাকে শেখর দাস প্রথমে একটি আপত্তিকর অশ্লীল ভিডিও পাঠান বলে অভিযোগ। তাতেই চক্ষু চড়কগাছ মহিলা ও তার পরিবারের সদস্যদের। বিষয়টি তার ছেলেকে জানাতেই তৃণমূল নেতার চরিত্র যাচাই করতে মায়ের একাউন্ট থেকে চ্যাটিং চালাতে থাকেন ছেলে। আর এর কিছুদিন বাদেই নানা রকম অশ্লীল প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেখর দাস নিজের আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে বলে অভিযোগ।
ছবি: অভিযুক্ত নেতা শেখর দাস।
আর তারপর এর বিরুদ্ধে সরব হলে তাদের নানাভাবে হেনস্থা করা ও হুমকি-হুশিয়ারী দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অপরদিকে দলে পদ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ওই মহিলার ছেলের কাছ থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকাও হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও সেক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয় ও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এদিকে নিজেরা তৃণমূল কর্মী হওয়ায় সমস্ত বিষয়টি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের কাছে জানান। কিন্তু সেক্ষেত্রেও গড়িমসি চলছে বলে অভিযোগ করেন ওই পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি আইএনটিটিইউসির রাজ্য নেতৃত্বেরও নজরে এনেছেন তাঁরা। একজন মহিলাকে স্যোশাল মিডিয়ায় কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করে হেনস্থার অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি শেখর দাস অবশ্য এনিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এই বিষয়ে জেলা নেতৃত্ব বলবে বলে উল্লেখ করে এড়িয়ে যান তিনি। এদিকে অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে নিন্দায় সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপির জেলা নেতৃত্ব একজন মহিলাকে এভাবে স্যোশাল মিডিয়ায় কুরুচিপূর্ণ আচরণ করার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তৃণমূলের অন্দরের তদন্ত কমিটিকে সর্ষের মধ্যে ভুত বলে কটাক্ষ করেছে।
তবে ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও এই ঘটনায় দলীয়ভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তৃণমূলেরই একাংশ। কিন্তু তৃণমূল নেতার এহেন কান্ডে স্বভাবতই তীব্র রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে।