এক ব্যক্তির দুবার মৃত্যু! তপনে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের ভুতুড়ে কান্ড শুনলে চোখ কপালে উঠবে আপনারও

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৩ জুন: মৃত্যুর শংসাপত্র বিলি নিয়ে ভুতুড়ে কান্ড তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে। ভুয়ো তথ্য দিয়ে একই ব্যক্তির নামে একাধিক শংসাপত্র দেবার অভিযোগ উঠেছে খোদ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। বিষয়টি শুনতে কিছুটা অবাক মনে হলেও, তপন ব্লকের হজরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে উঠেছে এমনই মারাত্মক অভিযোগ। যা সামনে আসতেই রীতিমতো শোরগোল পড়েছে গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। যদিও এই ঘটনা নিয়ে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এনেছেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ পঞ্চায়েত প্রধান রাব্বিনা বিবি।

প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার ১৪ দিনের মধ্যেই শংসাপত্র প্রদান করে স্থানীয় পঞ্চায়েত। যে সময়সীমা পার হলে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে বিডিও অফিস থেকে শংসাপত্র সংগ্রহ করতে হয়। সরকারি সেই নিয়ম মেনেই তপন ব্লকের হজরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষিরোট্টা গ্রামের বাসিন্দা তথা মৃত মুকুল বর্মনের শংসাপত্র সংগ্রহ করেন তার পরিবারের লোকেরা। তাদের দাবি, ২০২২ সালের ১৩ মে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যু হয় মুকুল বর্মনের। যে সময় তার বয়স ছিল ৫৭ বছর। মুকুলের মৃত্যুর পর যে তারিখ অনুযায়ী সরকারি শংসাপত্রও সংগ্রহ করেন তার পরিবারের লোকেরা। কিন্তু এরপরেই ঘটে সেই ভুতুড়ে ঘটনা। মুকুল বর্মনের মৃত্যুর দু’মাস কেটে যাবার পর ফের একটি মৃত্যুর শংসাপত্র বের হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে। যেখানে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৩ জুলাই মৃত্যু হয় মুকুলের। যা সামনে আসতেই রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে মৃত মুকুলের পরিবারের লোকেদের। একই মৃত ব্যক্তির দুটো আলাদা তারিখে কিভাবে মৃত্যু শংসাপত্র বের হল পঞ্চায়েত থেকে? যা নিয়ে প্রশ্ন জাগে মৃত মুকুলের পরিবার সহ ক্ষিরোট্টা গ্রামের প্রায় সকলেরই। যদিও এই ঘটনা নিয়ে সরাসরি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। তাদের দাবি, টাকা দিয়ে অন্য কেউ নিজের সুবিধামতো পঞ্চায়েত থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র বের করে নিয়েছে। তারা প্রকৃত মৃত্যুর তারিখ হিসাবে ১৩ মে শংসাপত্র বের করলেও সুবিধাবাদীরা দুর্নীতি করতে নিজেদের মতো করেই তা বের করে নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ষাট বছরের নীচে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত থাকা কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে এককালীন দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পায় তার পরিবারের লোকেরা। সেক্ষেত্রে মৃত মুকুল বর্মনের দুটি আলাদা তারিখে শংসাপত্র বের করা কি পঞ্চায়েতের দুর্নীতির নতুন কোনো কৌশল? সরকারি অফিসে বসে এধরণের দুর্নীতি চলবার পরেও কেনই বা নিশ্চুপ রয়েছে বিডিও বা জেলা প্রশাসন উঠেছে সেসব প্রশ্নও। শুধু কি মুকুল বর্মনেই শেষ, না আরো এমন অনেক ভুয়ো শংসাপত্র বের হয়েছে ওই পঞ্চায়েত থেকে? কারাই বা যুক্ত রয়েছে এর পিছনে? তৃণমূল পরিচালিত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে এমনই একগুচ্ছ প্রশ্ন সামনে এসেছে এই ঘটনাকে ঘিরে।

যদিও হজরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রাব্বিনা বিবির দাবি, আবেদন অনুযায়ী তারা মৃত্যুর শংসাপত্র প্রদান করেছিলেন। এর বাইরে আর কিছুই জানা নেই তার।

মৃত মুকুলের পরিবারের সদস্য সঞ্জয় বর্মন ও ভূপালি বর্মনরা বলেন, কাকার মৃত্যু হয়েছে ২০২২ সালের ১৩ মে। তারপরে কিভাবে দু’মাস পর আবার মৃত্যুর শংসাপত্র বের হল তা নিয়ে তারাও অবাক। টাকা দিলেই এখন সব কাজ হয়। সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা এখন রয়েছে। যেগুলো আদায় করতেই কেউ এসব করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *