আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২৪ এপ্রিল: অমানবিক রেল! শেষ পর্যন্ত রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক মাঝ বয়সী ব্যক্তির। খবর পেয়ে রামপুরহাট থানার পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তবে রেল পুলিশ মৃত ব্যক্তির কোন খোঁজ খবরও নেয়নি।
ষ্টেশনের ভবঘুরেদের দাবি, মৃত ব্যক্তির নাম রতন চট্টোপাধ্যায়। বাড়ি কলকাতার কালীঘাটে। কয়েক বছর আগে তিনি কলকাতা থেকে পালিয়ে এসে রামপুরহাট ষ্টেশনে ডেরা নিয়েছিলেন। দিনের বেলা রিক্স টেনে আয়ের টাকায় খাওয়াদাওয়া সেরে রাতে ষ্টেশনের টিকিট কাউন্টারে ফ্যানের নিচে শুয়ে পড়তেন। কিন্তু লকডাউনের পর রেল পুলিশ তাদের ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্ম তো দূরের কথা বাইরের কাউন্টারেও ঘেঁষতে দেয় না। ফলে খোলা আকাশের নীচে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কোনও রকমে ভবঘুরেদের সঙ্গে কাটছিল তাঁর।
এদিকে লকডাউনের পরের দিন থেকেই রামপুরহাট ষ্টেশনে ভবঘুরেদের জন্য দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছে রামপুরহাট পুলিশ প্রশাসন, বীরভূম জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং রামপুরহাট প্রেসক্লাব। কয়েকদিন থেকেই ভবঘুরেরা মাথায় রোদ নিয়ে খাওয়াদাওয়া সারতে তাদের কষ্টের কথা সাংবাদিকদের জানান। সেই মতো সাংবাদিকরা ষ্টেশন প্রবন্ধক পুষ্কর কুমারের সঙ্গে কথা বলেন। পুষ্করবাবু মৌখিকভাবে খাওয়ানোর অনুমতি দেন। সেই মতো ষ্টেশনের বাইরে টিকিট কাউন্টারে খাওয়াতে শুরু করলে ভবঘুরেদের তাড়িয়ে দেন আরপি অফিসার অমিত কুমার গিরি। ফলে ফের খোলা আকাশের নীচে কাঠফাটা রোদে খাওয়া দাওয়া সারতে হয় তাদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খাওয়া দাওয়ার সময় কাঠফাটা রোদে কষ্টের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। এরপর রাত থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। তাতেই আর পাঁচজন ভবঘুরের সঙ্গে ভিজেছিলেন মৃত রতনও। শুক্রবার দুপুরে খাবার না খেয়ে ষ্টেশন চত্বরে একটি দোকানের ছায়ায় শুয়ে থাকতে থাকতেই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রামপুরহাট থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
লকডাউনের ফলে রামপুরহাটে আটকে পড়ে ভবঘুরেদের সঙ্গে কাটাচ্ছেন দমদমের তপন ঘোষাল। তিনি বলেন, “রোদ বৃষ্টিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। রেল পুলিশ কাউকে ষ্টেশনের কাছাকাছি ঘেঁষতে দেয় না। মৃত ব্যক্তি রাতে বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপছিল। দুপুরে বসে থাকতে থাকতে তিনি মারা যান। কি রোগে তিনি মারা গিয়েছেন বলতে পারব না। তবে রোদ, ঝড়-জলে তিনি যে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন তা বলতে পারি”। যদিও এনিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন রেল পুলিশ থেকে ষ্টেশন প্রবন্ধক।