প্রতীতি ঘোষ, আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ৩০ জুলাই: নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে গেছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই সঙ্গে জলমগ্ন পানিহাটি রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল। চরম সমস্যায় পড়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগী থেকে হাসপাতালের কর্মী সকলেই।
দু’দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন। এই বৃষ্টিতে জলমগ্ন পানিহাটি রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের সমস্ত বিভাগ ও গোটা হাসপাতাল চত্বর। হাসপাতালে আসা রোগী বা তার পরিজনেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। জমা জলের জন্য হাসপাতালে পরিষেবা দিতে আসা চিকিৎসকসহ হাসপাতালের কর্মীরা সমস্যায় পড়েছেন। হাসপাতালের এক তলায় থাকা প্রতিটি বিভাগ প্রায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে হাসপাতালের কর্মী, নার্স, এমনকি চিকিৎসকদের ওই জমা জলে দাঁড়িয়ে থেকেই কাজ করতে হচ্ছে। একদিকে রোগীরাও এই জমা জলের কারণে সম্পূর্ণ চিকিৎসা না করিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন ফিরে যেতে, কারণ প্রয়োজনে তাদের জল পার করেই এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগ বা শৌচাগারে যেতে হচ্ছে। জল যন্ত্রণার কারণে তারা বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালটি একটি পুকুরে পরিণত হয়েছে। এদিন হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীরা বলেন, “টানা বৃষ্টিতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। জল জমে গেছে চারিদিকে। আর তার মধ্যে দাঁড়িয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। সমস্ত ওয়ার্ডে জল ঢুকে গেছে ফলে জলের মধ্যে কাজ চালাতে হচ্ছে। প্রতি বছর একই চিত্র, কিন্তু কোনও স্থায়ী সমাধান কেউ করেন না।” এদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগিনী জমা জলের কারণে ছুটি নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় বলেন, “আমি বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছি। আমার চিকিৎসা এখনো বাকি ছিল, কিন্তু এই জলে খুব সমস্যা হচ্ছে। বাথরুম যেতে বা কোনও টেস্ট করতে হলে এই জল পেরিয়ে যেতে হচ্ছে আমাকে। এটা সম্ভব না। তাছাড়া জলের কারণে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ফলে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে সমস্ত রোগীদের।”
ওপর দিকে প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন পানিহাটি পৌরসভা। পৌর অফিসে জল পেরিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন পৌরকর্মী সহ পৌরসভায় পরিষেবা নিতে আসা মানুষজন, জমা জলের জন্য চরম বিপাকে সাধারণ মানুষসহ পৌর কর্মীরা। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে গেছে ব্যস্ততম রাস্তাগুলি। কামারহাটি পানিহাটি আগরপাড়া বিটি রোড, নিলগঞ্জ রোড জলমগ্ন হয়ে গেছে। দেখে মনে হয় কোনও নদী অথবা পুকুর। কামারহাটি গ্রাম রোড, ওল্ড নির্মাতা রোড, নীলগঞ্জ রোডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, আগরপাড়া মহাজাতি অঞ্চল জলমগ্ন। গাড়ি চালকরা প্রাণ হাতে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
রাবার ফ্যাক্টরির বাসস্ট্যান্ডের কাছে পুলিশ ব্যারিকেট করে দিয়েছে গর্তের জন্য। কামারহাটি চারমাতা রাস্তার মোড় বাস স্ট্যান্ড রাস্তা জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। তবে এই বৃষ্টির ফলে সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। রাস্তায় মিলছে না বাস বা অটো। যেগুলো নেমেছে সেটাও হাতে গোনা। ফলে রাস্তায় জলের মধ্যেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা ক্রমাগত চেষ্টা করছে জল নামানোর কিন্তু একটানা বৃষ্টি হওয়ায় জল নামতে সময় নিচ্ছে।