“দেশভাগ আমাদের বাঙালিত্বের চেতনাকে ভাগ করতে পারেনি“, মন্তব্য কবিরের

আমাদের ভারত, ১৩ এপ্রিল: বৃহস্পতিবার ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল ‘অজয় দে স্মারক বক্তৃতা’। এই সমিতি দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে থেকে দু’দেশের সম্পর্ককে এক অনন্যতা দান করেছে। অজয় দে ছিলেন ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৭১ সালে যাঁরা বাংলাদেশের মানুষদের এপার বাংলায় ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন অজয় দে। তিনি তাঁর পরিচিতি মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ১৯৭১ সালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি শুধু ভারত বাংলাদেশ নয়, ভারত ভিয়েতনাম মৈত্রী সমিতি, ভারত রাশিয়া মৈত্রী সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের মিনিস্টার (পলিটিকাল) এবং দূতালয় প্রধান সিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান
বলেন “অজয় বাবুর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা চিরজীবন থাকবে। তিনি যে মৈত্রীর আন্দোলন শুরু করে ছিলেন, আমাদের দায়িত্ব এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অজয় বাবুর মত মানুষের জন্য আজ ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক, বর্তমান শিখর অর্জন করেছেন।”

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বিশিষ্ট সংবাদিক এবং চিত্র পরিচালক শাহরিয়ার কবির বলেন, “রাজনৈতিক কারণে ভারত বাংলাদেশ ভাগ হলেও, এই ভাগ আমাদের বাঙালিত্বের চেতনাকে ভাগ করতে পারেনি নি। এটা শুরু হয়েছিল বঙ্গভঙ্গের পর থেকে। এই বাঙালিত্বের পরবর্তী পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছি।

শাহরিয়ার কবির বলেন, “আমিও ১৯৭১ সালে এদেশের মানুষের সাহায্য পেয়েছি। আমি মনে করি ১৯৭১ যে সব মানুষ আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁরাও মুক্তিযোদ্ধা। এক কোটি মানুষের মধ্যে ৭২ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এই কলকাতার মানুষ। ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেনি, এটি দুই পার বাংলার বাঙালির জয়। এই মৈত্রীর কারণেই কলকাতা আমার দ্বিতীয় শহর।”

তিনি বলেন, “তবে শুধু ১৯৭১ সালের পরিপেক্ষিতে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ককে সূচনা হিসেবে দেখলে হবে না। বঙ্গবন্ধু ১৯৬১ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। ১৯৭১ সালে ভারত যদি সীমানা উন্মুক্ত না করত, তাহলে ৩০ লক্ষ নয় ৩ কোটি মানুষ মারা যেত। আমরা ১৯৭১ সালে ’আকাশবাণী’-র খবরের জন্য অপেক্ষা করতাম। এক সময় ইয়াহিয়া মন্তব্য করে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ কোথাও নয়, আকাশবাণীতে হচ্ছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন “১৯৭১ সালে প্রচুর দুর্গা মণ্ডপে আমি দেখেছি, ঠাকুরের দু পাশে মুজিব এবং ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তি। মানুষের এই বিশ্বাস বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আন্দোলনকে গণ আন্দোলনে পরিণত করেছে। আজ হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে। তবে আমরা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছি। আশা করি আগামীতে তিস্তার সমস্যার সমাধান করবো। আমি মনে করি মীমাংসিত সমস্যাগুলি শেখ হাসিনা সমাধান করতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে সম্পর্ক বজায় রাখা খুব জরুরি”।

ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্টুডেন্ট হলে এদিন অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তার মধ্যে ছিলেন এস এস কে এম হসপাতালের চিকিৎসক ও প্রাক্তন অধ্যাপক সুশীল চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রবোধ চন্দ্ৰ সিনহা, বহুভাষাবিদ, অনুবাদক, লেখক শুভেন্দু সরকার প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *