রাজেন রায়, ১৯ জুলাই:
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কী?
পেগাসাস কথার অর্থ পক্ষীরাজ ঘোড়া। এটি একটি গ্রিক শব্দ। গ্রিক পুরাণে পক্ষীরাজ ঘোড়াকে পেগাসাস বলা হত। যদিও হিন্দি পুরানে পক্ষীরাজ ঘোড়ার নাম উচ্চৈঃশ্রবা। অর্থাৎ ইন্দ্রের বাহন– সমুদ্রমন্থনের সময় উঠে এসেছিল। বর্তমানে এটি একটি আড়িপাতার সফটওয়্যার। মোবাইলে আড়িপাতার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও তৈরি করেছে এই সফটওয়্যার।
মূলত কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
এই সফটওয়্যারের বিশেষত্ব যার মোবাইল হ্যাক করা হয় তিনি জানতে পারেন না যে তার মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে। ফোনে কি কথা বার্তা এবং হোয়াটসঅ্যাপে কি চ্যাট হয়েছে তার সম্পূর্ণ তথ্য জানতে পারা যায়। ফোনে কি তথ্য কি নথি কি ছবি রয়েছে তা সম্পূর্ণ জানতে পারা যায় এবং দেখতে পারা যায়।
কী ভাবে কাজ করে?
যার ফোন হ্যাক করা হবে তার কাছে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠানো হয়। সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই মোবাইল ব্যবহারকারীর অজান্তেই তার মোবাইলে পেগাসাস ইনস্টল হয়ে যায়।
হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল বা ভিডিও কল করেও সহজে পেগাসাস ব্যবহারকারীর মোবাইলে ইনস্টল করে দেওয়া যায়।
প্রথম কিভাবে পেগাসাসের খবর সর্বসমক্ষে এল?
২০১৯ সালে পেগাসাস নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছিল। ১৬টি সংবাদমাধ্যম মিলে পেগাসাস প্রজেক্ট নামে তদন্ত শুরু করেছিল। রবিবার সেই রিপোর্টের কিছু অংশ প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়।
২০১৯–এর অক্টোবর মাসে ফেসবুকের মালিকানাধীন সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ প্রথম জানিয়েছিল যে চারটি মহাদেশে প্রায় ১৪০০ জনের মোবাইল পেগাসাসের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, ভীমা কোরেগাঁও মামলার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সমাজকর্মী আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এনসিপি’র প্রফুল্ল প্যাটেলের মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে। ২০১৯ সালে যখন পেগাসাস নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। সেই সময় টরেন্টো ইউনিভার্সিটির সিটিজেন ল্যাবের কিছু গবেষক প্রথম এই খবর জানিয়েছিল। যে সমস্ত সাংবাদিকদের নাম উঠে এসেছিল তাদের মোবাইল পরীক্ষা করে তাদের মোবাইলে পেগাসাস এর উপস্থিতি মিলেছিল।
পেগাসাসের দ্বারা কারা আক্রান্ত?
৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিরোধী নেতা নেত্রী, একজন সাংবিধানিক পদাধিকারী, বহু ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধানরা, বহু সমাজকর্মী, আমলা আইনজীবী।
সরকার দাবি করেছে, নজরদারির যে অভিযোগ উঠছে সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ব্যক্তি পরিসরের মৌলিক অধিকারের প্রতি সরকার সর্বদাই দায়বদ্ধ। এ কথা জানিয়ে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ফোনে আড়িপাতা বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে আড়িপাতার জন্য সরকারি অনুমতি লাগে। নির্দিষ্ট নিয়ম এবং আইন মেনেই ফোনে আড়িপাতার ব্যবস্থা করা হয়।