মানুষের সমস্যার কথা জানতে হিলি যাওয়ার পথে আটকানো হল বিজেপি সাংসদকে, ধরানো হল হোম কোয়ারেন্টিনের নোটিশ

শ্রীরূপা চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ২৩ এপ্রিল :
করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ গরিব মানুষ। আর সেইরকমই ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে হিলি ব্লকের গরিব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সহ তাদের সমস্যার কথা জানাতে যাওয়ার পথে আটকে দেওয়া হল বিজেপির সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে রোগ ছড়ানোর মতো অভিযোগ পর্যন্ত করা হয়েছে বলে দাবি সাংসদের। এই নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার নিজে পুলিশের সঙ্গে কথা বললেও তারা সুকান্তবাবুকে যেতে দেনিন বলে অভিযোগ।

সুকান্তবাবু বলেন, আজ সকালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হিলিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল লকডাউনে ওই এলাকার মানুষের অবস্থা খতিয়ে দেখা এবং সেটা সরাসরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের জানানো। কিন্তু জাতীয় সড়কের ওপর মঙ্গলপুর ডিএভি স্কুলের সামনে তাঁকে আটকায় পুলিশ। সুকান্তবাবু সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন। পুলিশ জানায় তাঁকে এগোতে দেওয়া হবে না। সাংসদ ওই খানে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন ফোনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল নিজে। কিন্তু তার পরেও তাঁকে যেতে দেওয়া হয়নি। প্রায় ৫ ঘন্টা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন সাংসদ। কর্মরত পুলিশ কর্মীদের তিনি বলেন, রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষের জন্য যাতায়াত করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও পুলিশ কর্মীরা তাকে যেতে দিচ্ছেন না। বিজেপি সংসদের দাবি রাজনৈতিক কারণে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে। কারণ তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু তাঁকে কোনো রকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

এর কিছুক্ষণ পরেই কিছু স্থানীয় তৃণমূল মহিলা কর্মী সেখানে এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ সাংসদের। তাঁরা মিথ্যে অভিযোগ করেন সাংসদ লকডাউন পরিস্থিতিতে ৮-১০ জন লোক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদিও বিষয়টির প্রতিবাদ করে কিছু সাধারণ মানুষ। সাংসদ জানান তাঁর সঙ্গে শুধুমাত্র তার ড্রাইভার ও একজন সহযোগী ছিলেন। অর্থাৎ তাঁরা মাত্র তিন জন হিলিতে যাচ্ছিলেন। তাঁর গাড়িতে ১০ জন বসার মত জায়গাই নেই ফলে তিনি কিভাবে ৮-১০ জন লোক নিয়ে ঘুরতে পারেন। সাংসদ বলেন, পুলিশের সঙ্গে তার কথোপকথনের সময় বেশকিছু স্থানীয় মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিল। যাদের পুলিশ সেখান থেকে সরায়নি। এরপরেই এসডিও-র তরফে সাংসদকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর নোটিশ ধরানো হয়।

রাজ্য প্রশাসনের এই কাজের তীব্র বিরোধিতা করেন বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি জানান, তার সঙ্গে ঘটা এই ঘটনায় তিনি আইনি পথে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বালুরঘাট মহকুমা শাসক বিশ্বরঞ্জন মুখার্জি জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাংসদকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সবাইকে লকডাউন মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন। তৃণমূল সভাপতি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে সহানুভূতি আদায় করছেন। কিন্তু অন্যদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। উল্টে মহিলাদের পাঠিয়ে তাঁকে হেনস্থা করার চেষ্টা হয়েছে। সাধারণ মানুষ হাজারও অসুবিধায় থাকলেও তাঁদের কোনও মাথা ব্যাথা নেই। পুলিশ কেন তাঁর পথ আটকালো সেই বিষয়ে তিনি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেছেন।

বিজেপি সাংসদের তোলা অভিযোগ সম্পুর্ন ভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অর্পিতা ঘোষ। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অনুমতি নিয়ে কেউ কোথাও যেতেই পারেন। তবে তিনি শুনেছেন, কিছু মানুষ তাঁদের এলাকায় সাংসদ ও তার দলবলের ভিড় দেখে বাধা দিয়েছেন। এর সাথে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ত্রাণ বিলি করতে যাওয়া বিজেপি নেতাদের বিভিন্ন জায়গায় আটকানো হচ্ছে বলে কয়েক দিন ধরেই বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিজেপি সাংসদ জন বারলা, অর্জুন সিং, সব্যসাচী দত্তকে নিজেদের এলাকায় ত্রাণ বিলির সময় আটকানোর অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করে বলেছেন, প্রশাসন তাদের সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন খোদ রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকারও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *