আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৬ আগস্ট: আমফান ঝড় ও দীর্ঘদিন লকডাউনের ফলে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে মুরগি চাষে। কোনও ক্ষতিপূরণ না পেয়ে অসহায় ভাবে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে কয়েক হাজার মুরগি চাষি। দাবি সরকারি সাহায্য না পেলে না খেয়ে পরিবার নিয়ে মরতে হবে। কারণ একেই ঋণের বোঝা মাথায়, তার উপরে লকডাউনের জেরে কোনও কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা ছাড়া কোনও উপায় নেই মুরগি চাষিদের। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন এবং আমফান ঝড় এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের। মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য। ফলে বিপুল অঙ্কের টাকা ক্ষতি স্বীকার করে গ্রামের বেকার যুবকরা পড়েছেন চরম সমস্যায়।
উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গা থানার রাজবল্লভপুর গ্রামে কিছু মুরগি খামারের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা আর মুরগি চাষ করতে চাইছেন না। নতুন করে আবার মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করা মুরগি খামারিদের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আগামী দিনে মুরগি চাষ কম হাওয়ায় সঙ্কট দেখা দিতে পারে মুরগির মাংসের।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, গাইঘাটা, চাঁদপাড়া, গোবরডাঙ্গা, হাবড়া সহ বহু এলাকায় প্রচুর মুরগির খামার রয়েছে। এইসব গ্রামীণ এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ কেজি মুরগির মাংস কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি দেয়। রাজ্যের পোল্ট্রি ফেডারেশনের দাবি, রাজ্যে প্রায় ছয় লক্ষ পোল্ট্রি ফার্ম আছে। আর এই পোল্টি ফার্মের সঙ্গে জড়িত মানুষ রয়েছে প্রায় কুড়ি লক্ষ। গত কয়েক মাস লকডাউনের ফলে মুরগি খামারে চাষ সেভাবে হয়নি। তাছাড়া অনেকে চাষ করেও বাজারদর পায়নি, তারপর আমফান ঝড়ে প্রচুর খামার ভেঙ্গে পড়েছিল। এখনও বহু প্রাণী পালক আছেন যারা ভেঙ্গে পড়া মুরগির খামার টাকার অভাবে ঠিক করতে পারেননি। ঝড়ে বসতবাড়ি যেমন ভেঙ্গে পড়েছে, তেমনি ভেঙ্গেছে পোল্ট্রি ঘর। কেউ কেউ বসত বাড়ির ক্ষতিপূরণ পেলেও, ভেঙ্গে পড়া মুরগির খামারের কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি প্রাণী পালকরা। লকডাউনে সারা রাজ্য জুড়ে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হলেও আমফান ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে মূলত পাঁচটি জেলায়। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং নদীয়া জেলার কিছুটা অংশ।
পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিষ্ণু বোস বলেন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি আছে। এরমধ্যে ৫০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। সারা রাজ্যজুড়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সরকার যদি আগামী দিনে পোল্ট্রি ফার্মারদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে হয়তো বহু মুরগি খামারের মালিক চাষ বন্ধ করে দেবেন।