আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ৭ ডিসেম্বর: বাংলাদেশের মোহনপুরে আত্রেয়ী নদীর উপর অবৈধ ভাবে নির্মিত রাবার ড্যাম দ্রুত তুলে নেবার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়া হল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের তরফে। শুক্রবার মালদহে ভারত- বাংলাদেশের প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আধিকারিকদের তরফে ওদেশের উপস্থিত আধিকারিকদের কাছে দাবি রাখা হয় মোহনপুরে বাঁধ দেবার কারণে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় চরম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি কাজে সমস্যা জটিলতর আকার ধারণ করেছে। এই বাঁধ তুলে নেওয়া না হলে আগামীতে জেলায় আরো সমস্যা বাড়বে। দ্রুত তুলে নেওয়া হলেই এই সমস্যার সমাধান হবে। সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ওইদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশের আধিকারিকদের তরফে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয় জেলার আধিকারিকদের।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক প্রণব কুমার ঘোষ বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের আধিকারিকদের কাছে আমাদের জেলার তরফে দাবি রাখা হয় যাতে মোহনপুরে বাঁধ তুলে নেওয়া হয়। এই বাঁধ থাকার কারণে এই জেলার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আধিকারিকদের তরফে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আত্রেয়ী নদী কুমারগঞ্জের সমজিয়াতে বাংলাদেশে হয়ে প্রবেশ করে পতিরাম হয়ে বালুরঘাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের মোহনপুরে সেই আত্রেয়ী নদীতে রাবার ডাম্প দেবার ফলে শীত কাল থেকে গ্রীষ্মকাল একে বারে নদীর জল শুকিয়ে যায়। ফলে জেলাবাসী আত্রেয়ী জল থেকে বঞ্চিত হয়ে পরে। একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাঁধ ভেঙ্গে দেবার বিষয় তুলে ধরলেও বিষয়টি হিমঘরে চলে যায়। তবে এখন বাঁধ দেবার ফলে একটি সমস্যা তৈরী হলেও নতুন করে দীর্ঘ তিন বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে হটাৎ করে বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়াতে আত্রেয়ী নদীতে হড়কা বান সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে নদীর তীরবর্তী লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল জলের স্রোতে ভেসে চলে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের বড়সড় ক্ষতির মাসুল গুনতে হচ্ছে। খরার সময়ে আত্রেয়ী নদীর তীরে মূলত প্রচুর পরিমাণে কৃষকরা তরমুজ চাষ করে। এছাড়াও বিভিন্ন শীতকালীন ফসল চাষ করতে দেখা যায়। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে নতুন করে কৃষকরা চাষ করতে ভরসা পাচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, পুনরায় চাষ শুরু করলে আবার বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়া হলে ফের ফসল ক্ষতির মুখে তাদের পড়তে হবে।
একাধিক বার রাজনৈতিক দল থেকে নদী প্রেমীরা এই নিয়ে আন্দোলনে নামে। যদিও এখনো কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তবে এবারে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের তরফে বাঁধের সমস্যা দূর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে। শুক্রবার মালদহের সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে জেলার আধিকারিকদের তরফে ব্যাপক চাপ দেওয়া হয় যাতে বাঁধ দ্রুত তুলে নেওয়া হয়। তবে বৈঠকে উপস্থিত আধিকারিকগণ এই নিয়ে কোনও আশ্বাস না দিলেও বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখার দাবি জানান।