প্রণবকন্যা মঠে ধর্মসভায় স্বামী প্রণবানন্দজীর দুর্গা আরাধনাকে স্মরণ করলেন অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী

আমাদের ভারত, ৪ অক্টোবর:
কাশীধামে ১৯২৮ সাল থেকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। এই পুজো তার নানান শাখা কেন্দ্রও ইদানীং অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আচার্য প্রণবানন্দ শক্তি সাধনার প্রতীক রূপে দুর্গোৎসবের সিদ্ধান্ত নিলেও, এই পুজোর আয়োজনে হিন্দু জাতি গঠনের পরিকল্পনা করলেন৷ ব্রহ্মজ্ঞানী এই সিদ্ধপুরুষের সংকল্প ছিল, জাতীয় জীবনে শক্তির সাধনা প্রবর্তন। এই কাজ করার মধ্যে তিনি সদগুরু রূপে যেমন অসংখ্য হিন্দু নরনারীকে আশীর্বাদ ও আশ্রয় দিলেন, পাশাপাশি জাতীয় জীবনে বীর্যের অনুশীলন এবং সঙ্ঘশক্তির প্রবর্তন বা পুনঃপ্রবর্তন করলেন। লোকসমাজ এই কাজটিকে মনে করেন, ব্রহ্মজ্ঞানী হয়েও কাণ্ডজ্ঞান থাকা। হিন্দুরা ধর্মকে রক্ষা করলে, ধর্মও যে হিন্দুকে রক্ষা করবে তার অনন্য হদিশ দিলেন স্বামী প্রণবানন্দজী।

বারাসতের প্রণবকন্যা মঠেও প্রতিবছরের মত এবারও দুর্গাপূজার হচ্ছে। গতকাল সন্ধিপূজার পরে এক ধর্মসভার আয়োজন করে আশ্রম কর্তৃপক্ষ। সেখানে আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে দুর্গাপূজার রূপক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী, অধ্যাপক তথা হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য কীর্তনীয়া ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, বহু বাঙালি হিন্দু আজ নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে উদাসীন, সনাতনী ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন, কিন্তু হিন্দুদের বিরোধিতায় আগ্রাসী ভূমিকা পালন করতে উৎসাহী। পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত হয়ে এসেও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যেতে পারেনি এই হিন্দুসমাজ৷ এ প্রসঙ্গেই অধ্যাপক চক্রবর্তী স্বামীজির বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “হিন্দু আজ কোথায়? হিন্দু তো আজ হিন্দু নাই। চারিদিকে যা সব হিন্দুনামধারী– অবিশ্বাসী, নাস্তিক, ম্লেচ্ছ।”

১৯৪০ সালের দুর্গাষ্টমীতে কাশীধামে এক রুদ্ধদ্বার কক্ষে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মধ্যে নিজের সাধন শক্তি সঞ্চারিত করে দিয়েছিলেন মহারাজ। বাঙালি হিন্দুকে বাঁচানোর একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধিকে নির্বাচন করে গিয়েছিলেন তিনি।

অধ্যাপক চক্রবর্তী বলেন, দেবী দুর্গার আবির্ভাবের কাহিনির মধ্যে এবং আয়ূধ প্রাপ্তির উদাহরণের মধ্যে হিন্দু সমাজের একতা ও সমন্বয়ের বার্তা রয়েছে। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর সহ সকল দেবতার পুঞ্জিত শক্তি মিলেই দেবীর অবয়ব নির্মিত হয়েছে। সকল দেবতা নিজ নিজ গুরুত্বপূর্ণ আয়ূধ দান করে দেবীকে শক্তিমতী করে তুলেছেন। এই রকম দেবী কল্পনা সত্ত্বেও তাঁকে বিনা আয়ূধে আরাধনা মানেই, হিন্দু সমাজের ক্ষাত্র শক্তিকে অস্বীকার করা।

এদিনের ধর্মসভায় উপস্থিত ছিলেন মঠের সকল সন্ন্যাসিনী, ব্রহ্মচারী ও বিদ্যার্থীবৃন্দ। মঠে দীক্ষিত নানা অঞ্চলের ভক্তবৃন্দও ছিলেন। এখানে স্বামী প্রণবানন্দজীর ভাবাদর্শে মনুষ্য নির্মাণের কাজ চলে। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি চিন্তা চেতনায় ভারতীয়ত্বে সম্পৃক্ত করে এই প্রতিষ্ঠান, সঙ্গে সেবাকাজ এবং শিক্ষা বিস্তার। সম্পূর্ণ মাতৃশক্তির দ্বারা পরিচালিত এই মঠে একজন মাতৃশক্তিই পূজার কৃত্য সম্পাদন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *