হিমোফিলিয়া সোসাইটির অনুষ্ঠান

আমাদের ভারত, ১৮ আগস্ট: হিমোফিলিয়া একটি বংশগত অসুখ। এটি একটি রক্তের অসুখ, এই রোগে রক্ত জমাট বাঁধতে চায় না। আগে থাকতে জানা না থাকলে বা যথাযথ চিকিৎসা না হলে সার্জারি বা দুর্ঘটনায় অবিশ্রান্ত রক্তপাতের ফলে এই অসুখে রোগীর প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু জনসাধারণের এখনও এই অসুখ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। জন সচেতনতা বাড়াতে হিমোফিলিয়া সোসাইটি দীর্ঘ দিন ধরে এই অসুখ নিয়ে মানুষের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ‘মাস সেন্সিটাইজেশন অন হিমোফিলিয়া’ সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে হিমোফিলিয়া নিয়ে জন সচেতনতা বাড়ানোর এরকমই একটি উদ্যোগ।

হিমফিলিয়া সোসাইটি কলকাতা চ্যাপটারের পক্ষ থেকে প্রশান্ত মাল জানান, হিমোফিলিয়া কলকাতা চ্যাপটার দেশের সাতাশিটি চ্যাপটারের মধ্যে সবথেকে বড় ও পুরনো চ্যাপটার। বর্তমানে এক হাজারের ওপরে রোগী এই সংস্থায় নথিভুক্ত আছেন। করোনা অতিমারির বিগত দুই বছর কাটিয়ে সোসাইটির কাজকর্ম আবার স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

এরই অঙ্গ হিসাবে গত ছয় মাসে সোসাইটি ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, হুগলীর ইমামবাড়া হাসপাতাল এবং বারাসাতের জেলা হাসপাতালের মতো বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসকদের মধ্যে হিমোফিলিয়ার চিকিৎসার অগ্রগতি ও এই অসুখের রোগীদের প্রতি করণীয় সম্পর্কে কন্টিনিয়ুয়াস মেডিক্যাল এডুকেশন প্রোগ্রাম করছেন। কারণ হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে হিমফিলিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স থাকলে যে কোনও অসুখ নিয়ে হিমোফিলিয়া রোগী ভর্তি হলে বিশেষ সুবিধা হয়।

দেশের প্রখ্যাত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ তুফান কান্তি দলুই তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, আমাদের রক্তে ক্লটিং ফ্যাক্টর নামে বিশেষ ধরণের কতগুলি প্রোটিন থাকে, এগুলিই দরকারের সময়ে তরল রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এর মধ্যে হিমোফিলিয়া রোগীদের রক্তে ফ্যাক্টর ও ফ্যাক্টর IX কম থাকে। যে রোগীর শরীরে যত কম ফ্যাক্টর থাকে সেই রোগীর হিমোফিলিয়া ততই মারাত্বক হয়। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর VIII কম থাকে। এই ধরণের হিমোফিলিয়াকে ক্লাসিক হিমোফিলিয়া বা হিমফিলিয়া A বলা হয়। ফ্যাক্টর IX কম থাকলে সেই হিমফিলিয়ার নাম হয় হিমোফিলিয়া B। এছাড়াও অন্যান্য ক্লটিং ফ্যাক্টরের অভাবে বিরল ধরণের আরো কয়েকটি হিমোফিলিয়া দেখা যায়।

আধুনিক চিকিৎসায় হিমোফিলিয়া রোগীকে কৃত্তিম ভাবে তৈরি ক্লটিং ফ্যাক্টর কন্সেন্ট্রেট ইঞ্জেক্ট করে স্বাভাবিক করে তোলা হয়। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীকে সারাজীবনই এই মুল্যবান ইঞ্জেকশন গুলি নিয়মিত নিয়ে যেতে হয়।হিমোফিলিয়া ফেডারেশন ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে শুভাশিস বেহারা জানান যে দেশের চ্যপ্টারগুলির সমন্বয়কারি সংস্থা হিসাবে সেই ১৯৮৩ থেকে এই প্রতিষ্ঠান হিমোফিলিয়া নিয়ে কাজ করে চলেছে।
অনুষ্ঠানের প্রথমে সংস্থার সভাপতি সুশীল কুমার টোডি উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান। উপস্থিত রোগীরাও তাঁদের বিভিন্ন বক্তব্য জানান।

হিমোফিলিয়া সোসাইটি কলকাতা চ্যাপ্টারের টোটন বিশ্বাসের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সঙ্গে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *