উদয়নারায়ণপুরের বামুনপাড়ায় অভাবনীয় কাজ, অন্ত্যজ বর্ণের ১২ কন্যার পূজা

বিপ্লব রায়
আমাদের ভারত, ১ অক্টোবর: হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের অন্তর্গত রাজাপুর বামুনপাড়া ভট্টাচার্য বাড়িতে ২৩৭ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপূজা হচ্ছে।‌ ষষ্ঠীতেও বিশেষ উপাচারের মাধ্যমে দেবীবন্দনা হল। তবে, এই পূজায় বেশ কয়েকবছর ধরে পঞ্চমী তিথিতে কন্যা পূজন অনুষ্ঠান হয়। এলাকার ১২ জন অন্ত্যজ বর্ণের কন্যাকে ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা বিশেষ পূজা করে থাকেন।

এই কন্যাদের বাছাই পর্বটা অবশ্য সহজ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেক বিদ্বজ্জন। পরিবারের তাপস ভট্টাচার্যর কাছ থেকে জানা গেল, এই কন্যাদের চয়ন করা হয় গ্রামের বা এলাকার পুরোহিত, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, হাওড়া ও হুগলী জেলায় ১২টি টোল এর মার্গদর্শক, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় সংবর্ধনা প্রাপ্ত ডঃ অশোক কুমার বন্দোপাধ্যায় এবং গ্রামের কয়েকজন বিশিষ্ট প্রবীন নাগরিকদের মাধ্যমে।

সেই মত বাছাই পর্বের পর এবার পঞ্চমী তিথিতে ৩ জন রাজমিস্ত্রি তাপস হাম্বির, অভিজিৎ মালিক, শ্রীকান্ত মালিকের মেয়ে, ২জন মালবাহী ট্রলি ভ্যান চালক তপন দলুই, দীপঙ্কর দলুইয়ের মেয়ে, গ্রামের বিশিষ্ট প্রবীন সমাজসেবী প্রশান্ত সাউয়ের নাতনি, এক গ্রামীণ হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের মেয়ে, ৩ জন কারখানার শ্রমিকের মেয়ে, এক মেডিসিন হকারের মেয়ে, মিস্টির দোকানের কারিগর গৌতম পোঁড়ের মেয়েকে কন্যাপূজায় সামিল করা হয়।

এক পূজিতা কন্যার মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে পুরোহিত মশাইয়ের কাছ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়ায় ”আমরা ইতস্ততঃ করছিলাম, কিন্তু পুরোহিত মশাই আমাদের বলেন আমাদের শাস্ত্রে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। পূজায় অংশগ্রহণের অধিকার সকলের।”

পুরোহিত মশাই জানান, ‘সপ্তদশ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন ভাবে এখানকার সমাজে বিভেদ তৈরি করে সমাজের সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত হয়েছিল। এখন আমাদের সমাজে সম্প্রীতি রক্ষার কাজে এই পরিবারের তরুণরা এগিয়ে এসেছেন।

”যুক্তিহীন বিচারেতু ধৰ্ম্মহানি: প্রজায়তে॥” কেবল শাস্ত্রের দোহাই দিলে চলিবে না, “কারণ যুক্তিহীন বিচারে প্রজার ধৰ্ম্মহানি হয়ে থাকে। যে কোনও প্রকারে কার্য্য সিদ্ধি করাই সৰ্ব্বপ্রধান নয়।

দূর্গাপূজার পঞ্চমী তিথিতে এই পরিবারের বার্তা, ”সকলে এক সমাজের অঙ্গ, সকলের মধ্যে এক ও অভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *