
সাথী দাস, পুরুলিয়া, ২১ জানুয়ারি: ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বভার নিলেন কংগ্রেসের পূর্ণিমা কান্দু। হাইকোর্টের নির্দেশে প্রশাসন তাঁর প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম সেরে রেখেছিল। বেলা সাড়ে এগারটা নাগাদ সেই সন্ধিক্ষণ আসে। পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার বিধান পান্ডে পূর্ণিমাকে অফিসিয়াল কাজ বুঝিয়ে দেন। প্রয়োজনীয় সই করে দলীয় কাউন্সিলর ও নির্দল কাউন্সিলর শীলা চ্যাটার্জিকে নিয়ে পূর্ণিমা সহ ভিকট্রি সাইন দেখান প্রত্যেকে। বাড়ি থেকে পুর সভার উদ্দেশ্যে বেরোনোর দশ মাস আগে চিরদিনের মতো হারানো স্বামীর ছবির সামনে প্রণাম করে আশীর্বাদ চেয়ে নেন পূর্ণিমা। মন শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করা পূর্ণিমার চোখ ছল ছল করে উঠে। অশ্রু না গড়িয়ে পড়লেও কিছুক্ষণের জন্য ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে তাঁর মন। সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই নিয়ে সেই সময় তিনি কিছু বলতে চাননি। এই ভাবে স্বামী হারিয়ে চেয়ারম্যানের পদে বসতে চাননি পূর্ণিমা। আসলে ওই পদে স্বামীরই বসার ছিল বলে তিনি মনে করেন।
কার্যত কলকাতা হাইকোর্টে আপাতত আইনি জয় হল নিহত তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমার এবং কংগ্রেসের। এক সপ্তাহও হয়নি তার মধ্যে তিনজন ওই কুর্সিতে বসেছেন। এবার পূর্ণিমা বসলেন। পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে জটিলতা থাকছেই। শীলা চট্টোপাধ্যায়ের সদস্যপদ খারিজে আজ স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে পর্যন্ত আপাতত ওই পুরসভার চেয়ারপার্সন কংগ্রেস কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু। শুক্রবার এমনই নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। চার দিন আগে ১৬ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ঝালদা পুরসভার পুরপ্রধান পদে বসেছিলেন নির্দলের হয়ে জেতা কাউন্সিলর শীলা চট্টোপাধ্যায়। পরদিন ১৭ জানুয়ারি তিনি প্রথম কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’দিন কাটতে না কাটতেই ফের জটিলতা দেখা দেয়। ১৯ জানুয়ারি দল বিরোধী কাজের অভিযোগে শীলা চট্টোপাধ্যায়ের কাউন্সিলর পদ খারিজ করেন ঝালদার মহকুমা শাসক ঋতম ঝাঁ। আর তার এক ঘণ্টার মধ্যেই সুদীপ কর্মকারকে নতুন পুরপ্রধান হিসাবে ঘোষণা করে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। এতে সরাসরি মহকুমা শাসকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা এবং জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো। তিনি আজ বলেন, “একজন মহকুমা শাসক কী করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। গণতন্ত্রকে হত্যা করছেন।”
দায়িত্ব নেওয়ার দু’দিনের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে হতবাক হয়ে যান শীলা চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। শীলা চট্টোপাধ্যায়ের দায়ের করা মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে শুনানি হয়। সওয়াল জবাব চলার পর আদালত শীলা চট্টোপাধ্যায়ের কাউন্সিলর পদ খারিজ সংক্রান্ত মহকুমা শাসকের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে। পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণিমা কান্দুকে পুরপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলানোর নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি।
নব নিযুক্ত চেয়ারম্যান পূর্ণিমা বললেন, “পক্ষপাতিত্ব নয়, ঝালদার প্রতিটি ওয়ার্ডে সমানভাবে পুর পরিষেবা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ঝালদা পুরবাসীর কাছে এটাই এই বোর্ডের প্রতিশ্রুতি।”