রেশন কার্ড বন্ধক, অর্ধাহারে পুরুলিয়ার ঝালদার কয়েকটি পরিবার

সাথী প্রামানিক, পুরুলিয়া, ৮ এপ্রিল: করোনার জেরে দেশব্যাপী লকডাউন। মানুষ যাতে অনাহারে না থাকেন সেজন্য রেশন দ্রব্য ছয় মাসের জন্য বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। 

কিন্তু পুরুলিয়ার ঝালদা এক নম্বর ব্লকের সরজুমাতু গ্রামের ছবিটা অন্য রকমের। গ্রামের গরিব অসহায় কালিন্দী পরিবারগুলি বছরের অন্য সময় জেলারই বিভিন্ন প্রান্তে ইটভার শ্রমিক হিসাবে কাজে যান। টাকার অভাবে তাদের রেশনকার্ড বন্ধক রাখেন গ্রামের কিছু সম্ভ্রান্ত পরিবারের কাছে। জানা যায়, এক কালিন ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছেন। বর্তমানে ভাটা বন্ধ। কাজ হারিছেন ঐ শ্রমিকরা। করোনার জেরে এই দুঃসময়ে অনাহারে দিন গুনছেন সরজুমাতুর বেশকয়েকটি কালিন্দী পরিবার। ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও স্পর্শকাতর। 

যখন সরকার রেশনে বিনামূল্যে চাল, আটা, গম সহ অন্যান্য সামগ্রী দিচ্ছেন। যাতে কোনো মানুষ অনাহারে না মারা যায়। ঠিক সেই সময় উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা ঝালদা এক নম্বর ব্লকের সরজুমাতু গ্রামে। 

দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন তাই এই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার গুলো সমস্যায় পড়েছেন যদিও এখন সরকার টাকা ছাড়াই চাল আটা দিচ্ছে। কিন্তু সেই চাল আটাও পাচ্ছে না ঝালদার এই কালিন্দী পরিবারগুলি। কারণ এদের রেশন কার্ড গ্রামের
মোড়লদের কাছে বন্ধক রয়েছে তাই তারাই চাল আটা তুলে নিচ্ছে।

গ্রামের শ্যামলা কালিন্দী, ইন্দ্র কালিন্দী, রাধা কালিন্দী ও ভগীরথ কালিন্দীরা জানান, শুধু আমরাই নয় গ্রামের এরকম বহু পরিবার আছে যারা অসময়ে কারও মেয়ের বিয়ে বা কারও শরীর খারাপের সময় রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছেন কেও ২২ হাজার বা কেও ১০ হাজার টাকায়। কিন্তু এখন চলছে লকডাউন তাই আমাদের সমস্যা দেখা দিয়েছে ঘরে কিছু নেই। অন্যের বাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। 

রেশন কার্ড না থাকায় ডিলার চাল আটা দিচ্ছেন না। তারা চান যাতে অনাহারে না মারা যান। রেশনকার্ডগুলি যাতে ফেরত পান তার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।  লকডাউনের জন্য অসহায় ঐ পরিবারগুলি  লিখিত অভিযোগ করতে পারেননি।

বন্ধক ধারী গুনা কুইরি অবশ্য ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান,  ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে আমি দুইজনের রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছি।  গ্রামের আরও অনেকেই এরকম কার্ড বন্ধক  নিয়েছেন।আর এই কার্ডের চাল, আটা সুদ বাবদ বন্ধকীরাই নিয়ে থাকেন।যেদিন তাদের টাকা ফেরৎ দিবে কার্ড দিয়ে দেবেন বলেও জানান বন্ধকবাজরা। 

 
অন্যদিকে ওই গ্রামের রেশন ডিলার অমরেশ মাহাতো জানান যে কার্ড জিনি দেবেন রেশনের প্রাপ্য সামগ্রী তাঁকেই দিই। রাজ্য সরকারের রেশন কার্ড জমা রেখে অসহায় মানুষের সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির  সুদ কারবারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *