রাজেন রায়, কলকাতা, ২৬ জুলাই: দলের থেকে কোনও নেতা বড় নন। ২১ জুলাই ভার্চুয়াল জনসমাবেশ থেকে এই বার্তাই দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাই সাংগঠনিক রদবদলের একেবারে কর্পোরেট স্টাইলে ক্ষমতা হরণও করা হয়েছে বেশ কিছু প্রথম সারির নেতার। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক শুভেন্দু অধিকারী। যেখানে মনে করা হচ্ছিল পরিবহণমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শুভেন্দুবাবু আগামী বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন, সেই শুভেন্দু অধিকারীকেই কি না ছত্রধর মাহাতো, ঋতব্রত ব্যানার্জির সঙ্গে এক সারিতে নিয়ে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে? এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী এবং তাঁর পরিবারের আশা ছিল, এবার হয়তো শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পেতে পারেন। কিন্তু ক্ষমতা খর্ব করা নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে শুভেন্দু অনুগামী মহলে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে যেটুকু রাজনৈতিক সম্মানহানি হয়েছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ফিরে আসার সঙ্গে সেই হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। আর তার জন্য দলের দীর্ঘদিনের অনুগামী হলেও প্রশাসনিক থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে কোনওরকম সহানুভূতি না দেখিয়ে ক্ষমতাহ্রাস করা হচ্ছে বহু পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতার। শুধুমাত্র একা শুভেন্দু অধিকারীই নয়, আছেন কলকাতার প্রশাসক তথা প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিমের জামাই ইয়াসির হায়দার, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস, হাওড়ার অরূপ রায়, বালুরঘাটে অর্পিতা ঘোষ-সহ বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলও রয়েছেন ডানা ছাঁটার তালিকায়। তবে হেভিওয়েট নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী-সহ একাধিক নেতা রয়েছেন তাঁদের পুরনো জায়গাতেই।
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর আসনে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে বিজেপির দিলীপ ঘোষের কাছে তৃণমূলের মানস ভুঁইয়ার হার হয়। শুভেন্দু অধিকারী তাঁর দলীয় সহকর্মী মানস ভুঁইয়াকে যথার্থ সহযোগিতা করেননি বলেও অভিযোগ ওঠে। এতদিন পর্যন্ত দলীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে মুশির্দাবাদ, উত্তর দিনাজপুর এবং মালদার দায়িত্বেও ছিলেন শুভেন্দুবাবু। শুধু তাই নয়, মুর্শিদাবাদের অধীর চৌধুরীর গড়েও দুটি আসন তৃণমূলের ঘরে এনে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
কিন্তু এহেন শুভেন্দুবাবুর প্রতি আস্থা কেন কমল নেত্রীর? সূত্রের খবর, লকডাউনের জেরে বাস ভাড়া না বাড়ার পক্ষে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অন্যদিকে পরিবহণমন্ত্রী প্রাথমিক সম্মতি দিয়েও নাকচ করে দেন। আশা দেখিয়েও নাকচ করায় ক্ষুব্ধ হয় গণপরিবহণের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ইউনিয়নগুলিই। আর এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। শুভেন্দুর থেকে পুরো বিষয়টির দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন তিনি। আর এর ফলেই রাজনৈতিক দূরত্ব শুরু হয়ে যায়। যার ফলাফল গিয়ে পড়ে সাংগঠনিক রদবদলে। তবে ঘটনার প্রভাব নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশই। শুভেন্দু অনুগামী দলীয় নিচুতলার কর্মীরা এই ঘটনার ফলে কোনও রাজনৈতিক অঘটন যাতে না ঘটান, সে বিষয়ে সতর্ক ঘাসফুল শিবির।