সিবিআই অফিসারদের গ্রেফতারির দাবিতে ক‍্যাম্পে প্রতিবাদ নিহত লালন শেখের আত্মীয়দের, ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ রামপুরহাট মহকুমা আদালতের

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ১৩ ডিসেম্বর: সোমবার রাত থেকেই দিনভর উত্তপ্ত হল রামপুরহাট। সিবিআই অফিসারদের গ্রেফতারের দাবি করে বারোটি টোটো করে বগটুই ও বনহাট থেকে সংখ্যক মহিলারা সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক‍্যাম্পে জমায়েত হয়। একসময় তারা ব‍্যারিকেড ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকতে চায়। যদিও ভিতরে তখন মোতায়েন করা ছিল এক কোম্পানি সিআরপিএফ জওয়ান। ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন রামপুরহাট থানার আইসি ও এসডিপিও ধীমান মিত্র সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিছুক্ষণের মধ‍্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় হাজির হন। তাঁদের উপস্থিতিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ হয় বেলা ১১ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত। যদিও, পুলিশি মধ‍্যস্থতায় সেই অবরোধ ওঠে।

বিক্ষোভের জেরে এদিন রামপুরহাট আদালতে সিবিআই হাজিরাও বিলম্বিত হয় কিছুক্ষণ। সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক‍্যাম্পের সামনে চলছিল ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ। পাশাপাশি চলতে থাকে ব‍্যারিকেড ভেঙ্গে সিবিআই ক‍্যাম্পে ঢোকার চেষ্টা। এনিয়ে মহিলা পুলিশের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি বাধে। মৃত লালন শেখের মেয়ে রুকসারা খাতুন চিৎকার করে বলতে থাকে, আমাকেও আব্বার মতো মেরে ফেলো। তার দাবি, সোমবার বাড়িতে আব্বাকে নিয়ে এসে সিবিআই অফিসাররা হুমকি দিয়ে বলে, হার্ডডিস্ক দে, না হলে লালনকে ঝুলিয়ে দেব। খুব মেরেছে আমার আব্বুকে। এদিন একইভাবে সিবিআইয়ের শাস্তির দাবি করে মৃত লালনের দিদি নাজেরবানু বিবি কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। তিনি বলেন, যদি আমার ভাই দোষী ছিল আইন তার বিচার করে সাজা দিত। কোনো আফশোষ থাকতো না। কিন্তু অন‍্যায়ভাবে মেরে ফেললো কেন? তাঁর শূন‍্য দৃষ্টি সিবিআই ক‍্যাম্পে মোতায়েনে সিআরপিএফের দিকে চেয়ে সজ্ঞা হারালো কিছুক্ষণ। তাকে জল দেওয়া হল।

এদিন বাচ্চা কোলে নিয়ে জেল হেফাজতে থাকা ইমতিয়াজ হোসেনের পরিবার, রিটন শেখের স্ত্রী নার্গিসা খাতুন, লালনের ভাই রাস্টন শেখের স্ত্রী জুলি খাতুনরা নিজেদের বাচ্চা কোলে নিয়ে হাজির হন সিবিআইয়ের গ্রেফতারের দাবিতে। তাদের আশঙ্কা হয়তো বিচারের আগেই সিবিআই তাদের স্বামীকে মেরে ফেলবে।

বগটুই কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন রহস্যমৃত্যুতে সিআইডি তদন্ত চাইলেন স্ত্রী রেশমা বিবি। তাঁর অভিযোগ, লালনকে খুন করেছে সিবিআই। এমনকি, তাঁর জিভ কেটে নিয়েছে সিবিআই। তিন জন সিবিআই আধিকারিকের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ এনে রামপুরহাট থানায় এফআইআর করেছেন রেশমা।

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে লালনের দেহ দেখার পর কাঁদতে কাঁদতে আছরে পড়েন রেশমা। কাঁদতে কাঁদতে রেশমা বলে ওঠেন, “আমরা ওই সিবিআই অফিসারদের গ্রেফতারি চাই। সিআইডি তদন্ত চাইছি।”
এদিন হাসপাতালে রেশমা খাতুন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে বলেন, সোমবার সিবিআই আধিকারিকরা তাঁর বাপের বাড়িতে উপস্থিত হন। বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙ্গচুর করেন। শাসানি দেন হয় হার্ডডিস্ক দিতে হবে না হলে ৫০ লক্ষ টাকা তাঁদের চাই। লালনের স্ত্রী অভিযোগপত্রে লিখেছেন, “আমি ওঁকে (সিবিআই অফিসার) জানাই এত টাকা আমার কাছে নেই।” এর পর ওই তদন্তকারী অফিসার বলেন, “১২টার পর দেখ কী অবস্থা করি।” এর পর বেলার দিকে তাঁদের খবর দেওয়া হয় লালন মারা গিয়েছেন। অভিযোগ পত্রে বিলাস মহাগুট, ভাস্কর মণ্ডল ও রাহুল নামে তিনজনের বিরুদ্ধে স্বামীর উপর উপর অত্যাচারের অভিযোগ করেছেন রেশমা।
তার কোথায়, ওরা বলেছিল, পঞ্চাশ লক্ষ টাকা না দিলে এবং হার্ডডিস্ক না দিলে তোর স্বামীকে শেষ দেখা দেখেনে। পায়ে ধরে কতো কাকুতি মিনতি করেছি। কিন্তু ওরা শুনলো না। মেরে ফেললো। তারপর ভাস্কর মণ্ডল রাত ন’টায় ফোন করে বলে যা বলেছি তা বেলা বারোটার মধ‍্যে না দিলে যা বলেছি তাই হবে। লালনের স্ত্রী এফআইআএ অভিযোগ করে বলেন, সিবিআই অত‍্যাচার করে বড়ো বড়ো লোকের নাম বলিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু মিথ‍্যা না বলায় তাকে মেরে ফেলা হলো।

এদিকে, লালনের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ রামপুরহাট মহকুমা আদালতের। বিচারকের তদারকিতেই হবে এই তদন্ত। মঙ্গলবার সিবিআই টিম লালনের ভাই জাহাঙ্গীর শেখকে আদালতে তোলে। বিচারক তাঁকে সিবিআই হেফাজত থেকে জেল হেফাজতে পাঠায়। তাকে ২২ ডিসেম্বরের ফের আদালতে তোলা হবে। অন‍্যদিকে, ভিডিওগ্রাফির মাধ‍্যমে ডেপুটি ম‍্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লালন শেখের ময়না তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। এদিকে কলকাতা থেকে সিআইডির একটি টিম এবং দিল্লি থেকে সিবিআইয়ের আরেকটি দল উড়ে এসেছে রামপুরহাটে। কলকাতা হাইকোর্টেও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে মামলা করা হয়েছে।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here