রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে বাংলার সংস্কৃতিকে কলুষিত করার অভিযোগ বেলেঘাটা থানায়

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১০ মার্চ: বহুদিন নজরে না এলেও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্তোৎসবে তাঁর সৃষ্ট অপসংস্কৃতির ঝড় আছড়ে পড়ার পর তা মানসিক ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাকে। কিন্তু কিছুতেই দায়ের হচ্ছিল না অভিযোগ। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্যমুক্ত মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মঙ্গলবার বেলেঘাটা থানায় রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। শুধুমাত্র কলকাতায় নয় বিভিন্ন জেলায় তার (রোদ্দুর রায়) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হবে বলে এদিন জানিয়েছে শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত উৎসবে পিঠে ও বুকে আবির দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে অশ্লীল ভাষায় লেখার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। সাংস্কৃতিক পরিবেশ কবিগুরুর গানকে নিয়ে এরকম নোংরা প্যারোডি কিভাবে কেউ করতে পারে সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছুদিন আগে। রোদ্দুর রায় নামে ওই ব্যক্তি ফেসবুকে এবং নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে অশ্লীল ভাষায় প্যারোডি করে আপলোড করেছিলেন। এর পরেই রবীন্দ্রভারতীতে বসন্ত উৎসবে এহেন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে।

শুধু রবীন্দ্রভারতী নয়, মালদার একটি স্কুলেও কয়েকজন ছাত্রী রবীন্দ্রনাথের গানকে অশ্লীল ভাষায় প্যারোডি করে সে ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেছিল। মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও নিয়েও নিন্দা জানিয়েছেন সমাজের সকল স্তরের মানুষরা। ক্ষমা চেয়েছে মালদার সেই চার ছাত্রীও। এমনকি রবীন্দ্রভারতীর ওই অভিযুক্ত পাঁচ জন তরুণ-তরুণী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে।

এসব কিছুর মধ্যেই বারবার প্রশ্ন উঠেছে যে এই রবীন্দ্রসঙ্গীতে অশ্লীলতা শুরু করল অর্থাৎ সেই রোদ্দুর রায় কে কেন গ্রেফতার করা হবে না। রবীন্দ্রভারতীর ঘটনার পর ফেসবুক এবং ইউটিউবে রোদ্দুর রায় অভিযুক্ত তরুণ-তরুনীদের সমর্থনে একটি অশ্লীল মন্তব্য ভিডিও প্রকাশ করেন। তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে তিনি বলেছেন, বাংলার ভেঙে পড়া শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে এটা ছাত্র ছাত্রীদের মুক্ত প্রতিবাদ। সংস্কৃতির উপলব্ধি থাকলে এটা হত না। এই সিস্টেমে এটাই স্বাভাবিক।’

এই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ।এদিন অভিযোগ দায়ের করে সংগঠনের তরফে এক সদস্য জানিয়েছেন, ‘রোদ্দুর রায় শুধুমাত্র রবি ঠাকুরের গানকে কলুষিত করেছে তা নয় সে সমাজকেও কলুষিত করেছে। যে ভাবে গান গেয়েছে তাতে সমাজের সাংস্কৃতিক ক্ষতি হয়েছে। সমাজকে কলুষিত করার দায় ওর’। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের তরফে আরও জানানো হয়েছে, রবীন্দ্র সংগীতের অপপ্রচার করেছে সে। মালদায় এবং রবীন্দ্র ভারতীর ঘটনার জন্য রোদ্দুর রায়ই দায়ী। ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক মুক্ত মঞ্চের ওই সদস্য বলেন, ‘পুলিশের স্বপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করার উচিত ছিল। পুলিশ যখন সে কাজ করেনি তাই দায়িত্ব নিয়ে আমরাই অভিযোগ দায়ের করলাম।’ এখন আইনানুগ ব্যবস্থা নিক পুলিশ। এফআইআর দায়েরের পর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *