পুরুষ নয়, স্কুলের সরস্বতী পুজোর পুরোহিত একাদশ শ্রেণির রোহিলা হেমব্রম

আমাদের ভারত, মালদা, ২৯ জানুয়ারি: এবার সরস্বতী পুজো দু’দিন। তাই আগামীকাল বৃহস্পতিবার হবিবপুর ব্লকের দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে সরস্বতী পুজো হবে। পুজো করবেন একাদশ শ্রেণির অ-ব্রাহ্মণ আদিবাসী ছাত্রী রোহিলা হেমব্রম। জাতি বা ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়ে এবং লিঙ্গ-বৈষম্য ভুলে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। যা প্রচার হতেই আদিবাসী অধ্যুষিত হবিবপুর ব্লকের দাল্লা গ্রাম জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

পুজোর সমস্ত শিক্ষার প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছেন ওই আদিবাসী ছাত্রী রোহিলা হেমব্রম। আর বাগদেবীর আরাধনায় ওই ছাত্রীকে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ী থেকে শুরু করে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিশেষ করে পুজোর নিয়মাবলির ক্ষেত্রে ওই ছাত্রীকে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছেন আরএক অ-ব্রাহ্মণ শিক্ষক বিনয় বিশ্বাস। ইতিমধ্যে সরস্বতী পূজার একটি বই ওই ছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যা দেখে পূজা পাঠের নিয়মাবলীগুলি শিখে ফেলেছেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রোহিলা হেমব্রম।

দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ী বলেন, তিনি একজন ব্রাহ্মণ। কিন্তু জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে সরস্বতী দেবী বন্দনা করা হোক, এরকম চিন্তা ভাবনা নেওয়া হয়েছিল। তার জন্যই এই স্কুলের আদিবাসী ছাত্রীকে দিয়ে এবারের সরস্বতী পূজা করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লিঙ্গ-বৈষম্য ভুলে অ-ব্রাহ্মণ ওই ছাত্রীকে দিয়ে এবারে সরস্বতী পূজা করানো হবে। তাই ওই ছাত্রীকে পূজা করার সবরকম নিয়মাবলী ইতিমধ্যে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দাল্লা এলাকাটি মূলত আদিবাসী, রাজবংশী, নমঃশূদ্র অধ্যুষিত। এর আগেও ওই ছাত্রী নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া এবং নিজের বিয়ে আটকে জেলায় নজির সৃষ্টি করেছে। তার এই কর্মকাণ্ডের জেরে শিক্ষা দপ্তর এবং প্রশাসনের নজর কেড়েছে ওই ছাত্রী।

রোহিলা হেমব্রম বলেন, ”বেশ কিছুদিন আগেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সরস্বতী পুজো করার কথা বলেছিলেন। প্রথমে তো হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এরকম সিদ্ধান্তে। তাই কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তাই প্রধান শিক্ষকের কথা মতো আমি স্কুলে সরস্বতী পুজো করবো।”

ওই ছাত্রীর বাবা শ্যামলাল হেমব্রম, পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শ্যামলালবাবু বলেন, মেয়ে আমাকে পূজার ব্যাপারে জানায়। প্রথমত কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিন্তু পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের কথা জেনে খুবই খুশি হয়েছি। শ্যামলাালবাবু আরো বলেন,  সরস্বতী পূজা কেন, সব পুজোযই সকলের। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ এক। তাই জন্যই তো স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের মতোন অ-ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়েকে দিয়ে পুজো করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা চাই প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে এরকম ভাবেই যেন মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে সরস্বতী পুজো স্কুলে সম্পন্ন হবে । পুরোহিত হবে স্কুলের ছাত্রী রহিলা হেমব্রম। মন্ত্র উচ্চারণ থেকে শুরু করে তাঁকে সব ধরনের পুজোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *