কু-সংস্কারের বলি শিশু

আমাদের ভারত, ক্যানিং, ১৫ ফেব্রুয়ারি: ফের কু-সংস্কারের বলি হল এক শিশু। মৃত শিশুটির নাম ফরিদ সর্দার(৪)। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার জীবনতলা থানার অন্তর্গত উত্তর পাতিখালি গ্রামে। জলে ডুবে যাওয়া ঐ শিশুটিকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের তুকতাক করা হয়। এই তুকতাক করতে গিয়ে নষ্ট হয় অনেকখানি সময়। আর সেই কারণেই শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব
হয়নি শিশুটিকে।

এদিন দুপুরে ফরিদ খেলতে খেলতে সকলের অলক্ষ্যেই বাড়ির পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায়। সাঁতার না জানায় জলে ডুবে যায় সে। দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেন পরিবারের সদস্যরা। অনেকক্ষণ পরে পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় ফরিদের নিথর দেহ। এরপর তড়িঘড়ি চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে গিয়ে ঐ শিশুটিকে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের তুকতাক, ঝাড়ফুঁক চলতে থাকে পুকুরের পাড়ে। পুকুরের জল পিটিয়ে, পুকুরের পাশে আগুন জ্বালিয়ে, শিশুটিকে মাথায় তুলে ঘুরিয়ে বিভিন্ন ধরণের তুকতাক করতে থাকেন এলাকার কিছু ওঝা গুণিনরা। এর ফলে সময় যত গড়াতে থাকে ততই বিপদ বাড়তে তাকে ঐ ছোট্ট শিশুটির। প্রায় দুঘণ্টা পর, স্থানীয় এক চিকিৎসক কুতুবউদ্দিন সর্দার পরিবারের লোককে দীর্ঘক্ষণ বুঝিয়ে সুঝিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায় ঐ শিশুটিকে। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

চিকিৎসকদের দাবি, “আরও আগে হাসপাতালে শিশুটিকে নিয়ে আসা হলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হতো তাকে। শুধুমাত্র কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে তুকতাক করতে গিয়ে শিশুটির মৃত্যু ডেকে আনল তার পরিবার”।

যদিও চিকিৎসকদের দাবি মানতে নারাজ এলাকার বেশ কিছু মানুষজন। এলাকার বাসিন্দা আসমত পুরকাইত, সুফিয়া পুরকাইতরা বলেন,
“জল থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ফলেই মৃত্যু হয়েছে ফরিদের। আরও বেশ কিছুক্ষণ ওকে জলে ঘোরানো সহ অন্যান্য সবকিছু করা উচিৎ ছিল”।

তবে এই ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শিশুটির পরিবার। তার বাবা কুদ্দুস সর্দার বলেন, “গ্রামের সকলে বলল পুকুরে ঘোরাতে, জল পেটাতে তাই করলাম কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। আরও আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো ছেলে বেঁচে যেতো”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *