জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২৪ জুলাই: করোনার মারণ থাবায় সিঁটিয়ে গোটা বিশ্ব। সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতও করোনার মারণ কামড়ে আক্রান্ত। সংক্রামন রুখতে দফায় দফায় লকডাউন চলছে। আর এই করোনার রোগের প্রতিষেধকও অবিস্কার করেছে ভারত। ওই প্রতিষেধক বিনামুল্যে দেশবাসীকে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি লকডাউনে গরিব মানুষের স্বার্থে গরিব কল্যাণ যোজনা চালু করেছে কেন্দ্র সরকার। শুরুতে বিনামুল্যে উজ্জ্বালা গ্যাস, বিনামুল্যে রেশন আবার জনধন যোজনার অ্যাকাউন্টে আর্থিক সাহায্যও দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবারও বিনামুল্যে রেশন দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়েছে। সাধারন মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছাতে কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার দফতর বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মাধ্যমে তার সচেতনতা প্রচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে।
কিন্তু নির্দেশিকা আসলেও ওই প্রচারকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সেইলের দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ। আর তাই দুর্গাপুর ইস্পাতের জনসংযোগ আধিকারিককে অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগও জানিয়েছে বিজেপি।
ঘটনায় জানা গেছে, গত ৩ জুলাই দুর্গাপুর ইস্পাতের জনসংযোগ দফতরে গরিব কল্যাণ যোজনার সচেতনতার প্রচারে নির্দেশিকা আসে কেন্দ্র তথ্য সম্প্রচার দফতরের। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, গরিব কল্যাণ যোজনায় গরিব মানুষকে বিনামুল্য রেশনে খাদ্য সামগ্রী বন্টনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে এবং তা সাধারন মানুষের মধ্যে সচেতন প্রচার করতে ফেস্টুর্ন, হোডিং মাধ্যমে শহরে টাঙানোর জন্য। কিন্তু প্রায় একমাস হলেও দুর্গাপুর শিল্পশহরে সেরকম কোন হোর্ডিং, ফেস্টুর্ন টাঙানো হয়নি বলে অভিযোগ। আর তাই দুর্গাপুর ইস্পাতের এই সচেতনতা প্রচারে অনীহার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে দুর্গাপুর ইস্পাতের বর্তমান জনসংযোগ আধিকারিককে অপসারনের দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর দারস্ত হয়েছেন তারা। উল্লেখ্য, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা তাকে ফোনে দুর্গাপুর ইস্পাত সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান কিংবা ফোন ধরেন না বলে অভিযোগ। এবার খোদ সরকারের গরিব কল্যাণ যোজনার সচেতনতার প্রচারে অনীহার অভিযোগে রীতিমত শোরগোল পড়েছে শিল্পশহর জুড়ে।
দুর্গাপুরের বিজেপির গুনিজন সেলের কর্মী অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগে বলেন, “এর আগে দেশবাসীকে বিনামুল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে একটি সচেতনতার প্রচারে নির্দেশিকা এসেছিল। দেশের অন্যান্য ইস্পাত কারখানায় এবং সেখানের শহরে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ফেস্টুন হোর্ডিংয়ে মুড়ে ফেলেছে। অথচ দুর্গাপুর শহরে বহু আবেদনের পর দুটি হোর্ডিং দিয়ে দায় সেরেছিল। তখনও অভিযোগ করার পর আবারও কিছু ফেস্টুর্ন টাঙিয়ে ছিল।” তিনি আরও বলেন, ” দুর্গাপুর ইস্পাতের জনসংযোগ দফতরের কেন এই প্রচারে অনীহা বুঝতে পারছি না। জনসংযোগ আধিকারিক সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সরকারকে অপমান করছেন। তাই বাধ্য হয়ে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছি। বর্তমান জনসংযোগ আধিকারিকের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই বলে মনে করি।তাই অপসারণের দাবী জানিয়েছি।”
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বিএমএস শ্রমিক নেতা মানস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বহুদিন ধরেই সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে সংস্থার ভেতরে বহু আপত্তিকর কাজ কর্মে লিপ্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই জনমুখী প্রকল্পগুলির যথাযথভাবে প্রচার করছেন না। সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করছেন। তাই মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।”
পশ্চিম বর্দ্ধমান জেলা কংগ্রেস, সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ থাকলে তা মানা উচিত নিশ্চয়ই। তবে দুর্গাপুর ইস্পাতনগরীর জমিতে অবৈধ হোর্ডিং ব্যাবসা চলে। একশ্রেণির শ্রমিক নেতা এই ব্যাবসায় যুক্ত।” যদিও এবিষয়ে দুর্গাপুর ইস্পাতের জনসংযোগ আধিকারিক আশরাফুল হোসেন মজুমদার ও সংস্থার সিও এভি কমলাকরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।