
আমাদের ভারত, কলকাতা, ৭ মে: রবিবার, ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। তার আগে শনিবার থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মনে সাহস দিতে ও থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন করতে কলকাতা রোটারি সদনে অনুষ্ঠিত হল ‘সঞ্জীবন-২০২৩’।
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মিলন উৎসব ‘সঞ্জীবন’-এর রূপকার বিশিষ্ট রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ ও কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: সৌম্য ভট্টাচার্য।
থ্যালাসেমিয়া একটি সম্পূর্ণ বংশগত অসুখ। থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীর একটি জিনগত অস্বাভাবিকতা থাকে, যার ফলে রক্তে লোহিত কণিকা কমে যায় ও ত্রুটিপূর্ণ লোহিত কণিকা তৈরি হয়। এই রোগের বাহকের মধ্যে রোগের কোনও লক্ষণ থাকে না। কিন্তু বাবা বা মায়ের একজনও বাহক হলে সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বাবা মা দু’জনেই বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার পঁচিশ শতাংশ সম্ভাবনা বাড়ে।
থ্যালাসেমিয়া রোগীকে রক্তে অতিরিক্ত লোহার জন্য বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় ও সারা জীবনই বাইরে থেকে রক্ত নিয়ে রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণায়ক রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নিলে থ্যালাসেমিয়াকে অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। ‘কমপ্লিট হিমোগ্রাম’ নামের একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় রোগী থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না তা দেখা হয়। রিপোর্ট পজেটিভ হলে রক্তের ‘এইচপিএলসি’ পরীক্ষা করে রোগের ব্যাপকতা নির্ধারণ করা হয়। বাহক মায়ের গর্ভসঞ্চার হলে বারো সপ্তাহে একটি বিশেষ পরীক্ষা করে অনাগত শিশুর থ্যালাসেমিয়া হবে কি না জানা যেতে পারে।
ভারতকে বলা হয় থ্যালাসেমিয়ার রাজধানী। এই দেশে প্রতি বছর ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। এদের মধ্যে দারিদ্র ও চিকিৎসার অভাবে ৫০ শতাংশ আক্রান্ত ২০ বছর বয়স পূর্ণ করার আগেই মারা যায়। ভারতে মোট ৪০ লক্ষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে ১ লক্ষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। মেট্রোপলিস হেলথ কেয়ারে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রতি দুজনে মহিলার এক জন রক্তাল্পতায় আক্রান্ত।
এই অসুখ উপযুক্ত চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে এই অসুখে মানুষের মনোবল ভেঙে পড়ে। তাই চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় পরিবারের পরামর্শ প্রয়োজন হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুষ্ঠান কিছুদিনের জন্য হলেও থ্যালাসেমিয়া রোগী ও তার পরিবারকে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়ে আশার আলো দেখায়। এই ধরণের অনুষ্ঠান রোগীদের উদ্বুদ্ধ করে, আশার আলো দেখায়, মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইতে প্রেরণা যোগায়।
প্রায় একশোর উপর রোগী এদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন, একে অপরের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
আজকে অত্যাধুনিক ওষুধ বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের কল্যাণে বহু মানুষই ব্লাড ক্যান্সার বা থ্যালাসেমিয়াকে নিয়ন্ত্রনে রাখছেন। এরকম অনেকেই আজকাল তাঁদের রোগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।
ডাঃ সৌম্য ভট্টাচার্য বলেন যে, সঞ্জীবন শুধু থ্যালাসেমিয়া নয়, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মোকাবিলা করা পাহাড় প্রমাণ বাধা ও অসুবিধার বিরুদ্ধে জয়েরও বিজয় উৎসব। আলোচনা শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী, রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা একই মঞ্চে অনুষ্ঠান করেন।
ডা: সৌম্য ভট্টাচার্য একই সঙ্গে চিকিৎসক, সুগায়ক ও প্রতিষ্ঠিত লেখকও। অনুষ্ঠানে তাঁর নতুন বই প্রকাশিত হয়। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে পিকনিক গার্ডেন লীলা সেবা সোসাইটি। সোসাইটির পক্ষ থেকে বিশিষ্ট লেখক উজ্জ্বল চক্রবর্তীকে লীলা স্মৃতি পুরষ্কার দেওয়া হয়।