নথি সংরক্ষণ! আর্কাইভস ও মিউজিয়াম নিয়ে এক অনন্য আলেখ্য

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ১৫ সেপ্টেম্বর: লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা— এই কথাদুটোর সঙ্গে আমাদের যতটা পরিচয়, তার চেয়ে অধিকাংশের কাছে অনেক বেশি প্রচলিত আর্কাইভস কথাটা। যেমন, জাদুঘরের চেয়ে বেশি প্রচলিত মিউজিয়াম কথাটি। এর একটাই কারণ। অনেক প্রচলিত বাংলা শব্দই আমরা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ব্যবহার করি না। এটা ঠিক কী ভুল, তার উত্তর নির্ভর করে প্রত্যেকের নিজস্ব বোধের ওপর।

আমাদের অনেকের জানা আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সর্বোচ্চ বৈশ্বিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আর্কাইভস বা সংক্ষেপে আইসিএ। ২০০৭ সাল থেকে তারা আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস উদ্যাপন করে আসছে। আর্কাইভস দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ২০০৪ সালে ভিয়েনায় আইসিএ তার ১৫তম কংগ্রেসে আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। পরে ২০০৭ সালে আইসিএ তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় ৯ জুনকে আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। দিবস হিসেবে ৯ জুন বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে, ১৯৪৮ সালের ওই দিনে জাতিসংঘের (ইউনেসকো) পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিএ গঠিত হয়েছিল। এ থেকে সারা বিশ্বে ৯ জুন আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সভা, শোভাযাত্রা, বক্তৃতা, বিবৃতি ইত্যাদির সাহায্যে দিনটি উদ্যাপিত হয়।

একটি জাতির অতীতের সব কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষর আর্কাইভসে সংরক্ষিত থাকে।

মিউজিয়াম, অর্থাৎ জাদুঘর  বা সংগ্রহালয়  বলতে বোঝায় এমন একটি ভবন বা প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে। জাদুঘরে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তুসমূহ সংগ্রহ করে সংরক্ষিত করা হয়। সেগুলি প্রদর্শ আধারে রেখে স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে জনসাধারণকে দেখানো হয়।

এই দুই বিষয় নিয়ে প্রচুর গবেষণা, লেখালেখি হয়েছে। অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এবার প্রকাশিত হল গবেষকদের একটি সহায়িকা ডঃ মধুরিমা সেনের ‘ইনট্রোডাকশন টু আর্কাইভস অ্যান্ড মিউজিয়াম’। প্রথমেই মধুরিমা জানিয়েছেন, গ্রিক ‘আর্কি’ শব্দ থেকে কীভাবে জন্ম নিল আর্কাইভস কথাটা, ১৭৮৯ সালে কীভাবে ফ্রান্সে জন্ম নিল প্রথম জাতীয় লেখ্যাগার, ১৮৩৮-এ ইংলন্ডে জন্ম হল সেন্ট্রাল আর্কাইভসের, ১৯৩৪-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিষ্ঠা করল ন্যাশনাল আর্কাইভসের।

ভারতের ন্যাশনাল আর্কাইভসের আঁতুরঘর ছিল এই কলকাতায়। সেই ইম্পিরিয়াল রেকর্ড ডিপার্টমেন্ট কীভাবে ধীরে ধীরে বিকশিত হল, তা জানা যাবে মধুরিমার এই বইতে। আছে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল আর্কাইভস, ভোপালে এটির আঞ্চলিক দফতর, জয়পুর ও পন্ডিচেরির (অধুনা পুডুচেরি) রেকর্ড সেন্টার, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাডুর রাজ্য লেখ্যাগারের নানা কথা।

পাঁচটি নির্দিষ্ট তথ্যপঞ্জী-সহ ২৭১ পৃষ্ঠার এই বইয়ে ৬৪ পৃষ্ঠা (১৪৫-২০৮) আছে বাংলায় কয়েকটি নিবন্ধ। যেমন নথি ও লেখ্য, নথি সংরক্ষণ ও নথি সম্পর্কে ধারণায় ক্রমবিবর্তন, লেখ্যাগারের প্রকারভেদ— একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা, লেখ্যাগার ও গ্রন্থাগার— দুটি স্বতন্ত্র বা সম্পূরক প্রতিষ্ঠান, সংরক্ষণ ও লেখ্যাগার— একটি পর্যালোচনা প্রভৃতি।

বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও যাদবপুরের ডক্টরেট মধুরিমা রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের অধীন স্টেট আর্কাইভসের আর্কাইভিস্ট। এই বইতে তাঁর লেখা ও সংকলন ছাড়াও আছে স্টেট আর্কাইভসের রিনা সিনহা, এই প্রতিষ্ঠানের দুই প্রাক্তনী আশিস বিশ্বাস ও স্বপন মুখার্জি, ন্যাশনাল আর্কাইভসের প্রাক্তন সহ অধিকর্তা রাজমনি, রবীন্দ্রভারতীর সহকারী অধ্যাপক ডঃ বৈশাখী মিত্র প্রমুখের মূল্যবান লেখা।

বইটির সুন্দর ছাপা ও বিন্যাসে আকর্ষণ বাড়িয়েছে মেঘমালা ভট্টাচার্যের প্রচ্ছদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *