রাজভবনের ওপর নজরদারি করে গোপন তথ্য ফাঁস! রবিবার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রাজ্যপালের

রাজেন রায়, কলকাতা, ১৬ আগস্ট: স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে মুখ্যমন্ত্রী আচমকা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পরেও বিকেলে সর্বদলীয় চা-চক্রে উপস্থিত না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এবার রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ফের মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজভবনের ওপর নজরদারির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘রাজভবনের গোপন তথ‍্য কী করে রাজ‍্য প্রশাসনের সবোর্চ্চ স্তরে চলে যাচ্ছে? এটা কোনও পরিস্থিতিতে কখনই কাম্য নয়।’

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজভবনে সর্বদলীয় চা-চক্রের আয়োজন করেছিলেন রাজ্যপাল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী সহ সব দলের সদস্যরা আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালবেলাতেই রেড রোডের অনুষ্ঠান সেরে সরাসরি চলে যান রাজভবনে। অনেকেই ভেবেছিলেন, রাজভবন-নবান্নের সংঘাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু বিকেলেই মুখ্যমন্ত্রী না আসায় উষ্মা প্রকাশ করে রাজ্যপাল বলেন, ‘ফাঁকা চেয়ার বড় আওয়াজ করে।’

শনিবার বিকেলে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি রাজ্যপাল। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে ফের মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত আক্রমণ করেন তিনি। একই সঙ্গে বলেন, ‘রাজভবনের ওপর নজরদারি চলছে। গোপন তথ্য বাইরে চলে যাচ্ছে।’ কিন্তু কে রাজভবনে এই কাজ করছে, সে বিষয়ে খোলসা করে কিছু বলতে চাননি তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে প্রথমে তিনি বলেন, “আমি মুখ‍্যমন্ত্রীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে বলেছিলাম সম্পূর্ণ কোভিড প্রোটোকল মেনে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। উনি খুবই বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এমনটা কোনও জায়গায় কখনও এর আগে হয়নি। আমি বাকরুদ্ধ। উনি সকালে যখন এসেছিলেন তখন কাজে ব্যস্ত ছিলাম আমি।” অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক মর্যাদা অসম্মানিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এরপরেই তিনি বলেন, রাজভবনের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। রাজভবনের কোনও কর্মচারী রাজ‍্যপালের কথা শুনবে না, এমন আচরণ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। রাজভবনের গোপন তথ‍্য কী করে রাজ‍্য প্রশাসনের সবোর্চ্চ স্তরে চলে যায়? যে এই কাজ করুন না শাস্তি পাবেন। তদন্ত শুরু হয়েছে। নবান্নের কোনও গোপন তথ‍্য এভাবে এলে আমি সতর্ক করতাম।’ রাজ্যপালের দাবি, রাজ্য প্রশাসনের ইঙ্গিত ছাড়া কখনও একাজ হতে পারে না।

এ সব কথার মধ্যেই বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট নিয়েও এদিন রাজ্যকে ফের কটাক্ষে বিঁধলেন তিনি। এই প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি আগেও ট্যুইট করেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “কত বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আর কত এসেছে, কিংবা কত কাজের প্রতিশ্রুতি হয়েছিল, কত পূরণ হয়েছে, তার এখনও উত্তর পাওয়া যায়নি। সংবিধানের নিয়ম মেনেই এই তথ‍্য জানানোর কথা বলা হয়েছিল। তার উত্তর এখনও পাইনি।” তাঁর অভিযোগ, রাজ‍্য সরকার শুধু মাত্র বিজ্ঞাপনের মধ‍্য দিয়ে চলতে পারে না।

এছাড়া স্বাধীনতা দিবসের দিন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু, মাওবাদীর পোস্টার সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে এদিন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “১৫ অগষ্ট আমার কাছে আবারও বেদনার দিন হয়‌ে উঠল। এই দিন এই রাজ‍্যে রাজনৈতিক খুন হল। হুগলি আর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ঘটনা কষ্ট দিল। আবার কার্যক্রম প্রকাশ হচ্ছে মাওবাদীর। আইন নেই এমন একটা রাজ‍্যে যেন আমরা বাস করছি। এই সমস্ত ঘটনা আমার কাছে অত্যন্ত লজ্জাজনক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *