অকল্যান্ডে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়ানশিপে বাংলার সীমা ও অংশুর সোনা জয় 

জয় লাহা, আমাদের ভারত, দুর্গাপুর, ৩০ নভেম্বর: কোভিডে হারিয়েছে বাবাকে। আর বাবার স্বপ্নপূরণই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। একের পর এক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে স্বপ্নপূরণে অবিচল ছিল। অকল্যান্ডে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়ানশিপে জোড়া সোনা জয় করল দুর্গাপুর তথা বাংলার সোনার মেয়ে সীমা দত্ত চট্টোপাধ্যায়। একই সঙ্গে আরও একটি সোনা জয় করেছে সীমার প্রশিক্ষক অংশু সিং। তাদের সাফল্যে গর্বিত দুর্গাপুর শিল্পশহরবাসী। 

প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর থেকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে কমনওয়েলথ পাওয়ার লিফিটিং ও বেঞ্চপেস চ্যাম্পিয়ানশিপ ২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উদ্যোক্তা ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ারলিফটিং ফেডারেশন ও এশিয়ান পাওয়ারলিফটিং ফেডারেশন। আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এবারে ১৬ টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছে।মূলত পাওয়ারলিফটিং ও বেঞ্চপেস দুটি বিভাগে জুনিয়ার, সাব জুনিয়ার, মাস্টার ওয়ান, টু, থ্রি ও ফোর ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। যার মধ্যে ভারতের ৮০ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে। মূলত জাতীয় স্তরে যেসব প্রতিযোগী সোনা ও রূপো জেতে তারাই ওই প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়। তার মধ্যে দুর্গাপুরের সীমা দত্ত চট্টপাধ্যায় ও অংশ সিং নির্বাচিত হয়। কঠিন অনুশাসনের মধ্যে সেখানে কমনওয়লেথ প্রতিযেগিতা হয়। ২৯ নভেম্বর ছিল ইকুইপড ও ক্লাসিক বেঞ্চপেস প্রতিযোগিতা। তাতে দুর্গাপুরের সীমা ৬৩ কেজি বিভাগে নজরকাড়া সাফল্য করে। দুটি বিভাগে দুটি সোনা জয় করে। একই সঙ্গে অংশু সিং ৮৩ কেজি ইকুইপড বেঞ্চপেস বিভাগে একটি সোনা জয় করে। এটাই শেষ নয়। আগামী ১ ডিসেম্বর আরও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে সীমার। এদিন ইকুইপড ও ক্লাসিক পাওয়ারলিফটিং প্রতিযোগিতার স্কোয়াট, বেঞ্চপেস ও ডেডলিফটিং রয়েছে। তাতে সাফল্য হওয়ার ওভার অল সোনা জয় হবে।

দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা সীমা দত্ত চট্টোপাধ্যায়। স্বামী অরূপ চট্টোপাধ্যায় পেশায় ব্যাবসায়ী। তার মেয়ে আকাঙ্কা দত্ত চট্টোপাধ্যায়। সংসারের কাজ সামলে পাওয়ারলিপটিং করতে ভালোবাসে সীমা। ২০১৯ সাল থেকে তাতে হাতেখড়ি শুরু। দ্বিতীয়ত পাওয়ারলিফটিং’কে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয়। কারণ, তার বাবা সুখময় দত্তর স্বপ্ন ছিল সীমা বিশ্বের দরবারে দুর্গাপুর তথা ভারতবর্ষের মুখ উজ্জ্বল করবে। গত ২০২১ সালে সুখময় বাবুর মৃত্যু হয় কোভিড -১৯, একই সঙ্গে রাজ্য পাওয়ার লিফিটিং অ্যসসোশিয়েশনের সভাপতি রতন বসাকের মৃত্যু হয় কোভিডের প্রথম ধাপে। কারণ রতন বসাক পাওয়ারলিপিটেংয়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে দেয় সীমাকে। আর ওই দুই অবিভাবকের মৃত্যুর পর বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয় সীমা। তারপর থেকে সীমা নিজের জীবন দর্শন পাল্টে নেয়। নিজের প্রতি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়। লক্ষ্যকে সামনে রেখে কঠিন সাধনা আর নিয়মিত অনুশীলন জেলা থেকে রাজ্য ও জাতীয়স্তরে শীর্ষস্থানে উঠে আসে। কয়েকদিন আগে এশিয়ানে সোনা জয় করে। তারপর আজ বিশ্ব দরবারে সীমার জোড়া সোনা। সাংসারের কাজ সামলে নিজেকে তৈরী করা একজন গৃহবধূর কাছে দৃষ্টান্তই শুধু নয়, বড় চ্যালেঞ্জ। আজ তার সাফল্য আর পাঁচটা মেয়েকে প্রেরনা জুগিয়েছে।

সীমা জানান, “সাংসারের কাজ সামলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। মহিলারা এভাবেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলুক। এবার আমার লক্ষ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হওয়া। দেশের জন্য সোনা জয় করা।” একই সঙ্গে অংশু সিং সীমার প্রশিক্ষক। তিনিও এবারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। অংশু কলকাতার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে দুর্গাপুরে থাকেন। অংশু সিং ৮৩ কেজি ইকুইপড বেঞ্চপেস বিভাগে একটি সোনা জয় করে। আর বাংলার এই দুই সোনার ছেলে মেয়ের সাফল্যে গর্বিত দুর্গাপুর তথা পশ্চিমবঙ্গবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *