শেওড়াফুলির ঐতিহ্যের রাজবাড়ি প্রায় সাড়ে চারশো বছরের, পুজো শুরু সোমবার

আমাদের ভারত, হুগলী, ১৬ সেপ্টেম্বর: হুগলী জেলায় শেওড়াফুলি রাজবাড়ির ২৮৯-তম বর্ষ দুর্গাপুজো শুরু কৃষ্ণনবম্যাদিকল্পারম্ভে। ২ আশ্বিন সোমবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে ৯ টায় দেবীর বোধনের ঘট প্রতিষ্ঠা হবে। শুক্রবার শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতির ব্যস্ততা।

পরিবারের তরফে আশিস ঘোষ এই প্রতিবেদককে জানান, “প্রাচীন রীতি মেনে আজও জিতাষ্টমীব্রত পালন হয়। বাংলার হিন্দুসমাজের অশাস্ত্রীয় বা মেয়েলি ব্রতগুলির অন্তর্গত একটি সধবাব্রত। গ্রামীণ বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের মহিলারা সন্তানের আয়ুবৃদ্ধি ও মঙ্গলকামনায় এই ব্রত পালন করেন। এটি আশ্বিন মাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়। ‘জিতাষ্টমী’-র পরের দিন থেকে শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু হয়।”

আশিসবাবু বলেন, “রীতিটিকে বলা হয় ‘কৃষ্ণনবম্যাদি কল্পারম্ভ’। ওই দিন থেকে প্রতিদিন সকালে মন্দিরে চণ্ডীপাঠ হয়, সন্ধ্যায় আরতি হয়। অনেক বনেদী বাড়িতে ও মন্দিরে কৃষ্ণনবম্যাদিকল্পারম্ভে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গা মূর্তি মা সর্বমঙ্গলা। এটি অষ্টধাতুর। দেবীর বাহন আছেন কিন্তু পুত্র কন‍্যারা নেই। দশমীর দিন শেওড়াফুলি নিস্তারিণী মায়ের ভাগীরথীর ঘাটে বিসর্জন হয়।”

শেওড়াফুলি রাজবাড়ি প্রায় সাড়ে চারশো বছরের। এনাদের আদি রাজবাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার পাটুলিতে। পাটুলি সেই প্রকাণ্ড রাজবাড়ি ভাগীরথীর গহ্বরে চলে যায়। সেই কারণে এই বংশ চলে আসে প্রথম বাঁশবেড়িয়া পরের ভাই শেওড়াফুলি। পাটুলির কুলদেবী মা মহিষমর্দ্দিনী কষ্টি পাথরের দুর্গা মূর্তি পুজিত হতেন। সেটা প্রায় ৬০০ বছরের পুরানো বিগ্রহ। সেই বিগ্রহও আমাদের শেওড়াফুলিতে নিত‍্য পূজিত হচ্ছেন। আর মা সর্বমঙ্গলাকে প্রতিষ্ঠা করেন রাজা মনোহর চন্দ্র দত্ত রায়।

আশিস ঘোষ জানান,
“’কল্প’ শব্দের অভিধানিক অর্থ পুজাবিধি। সুতরাং পুজোবিধি আরম্ভ হল কল্পারম্ভ। আমরা জানি দুর্গাপুজায় সাতটি কল্প আছে। ভাদ্র কৃষ্ণনবমী থেকে আশ্বিন শুক্লানবমী পর্যন্ত তিথি সমূহের মধ্যে এই সাতটি কল্প বিন্যস্ত। যথা – কৃষ্ণনবমী, শুক্লা প্রতিপদাদি, ষষ্ঠ্যাদি, সপ্তম্যাদি, অষ্টম্যাদি, কেবল মহাষ্টমী, কেবল মহানবমী। এর মধ্যে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভের পুজা সমধিক প্রচলিত। কোনও কোনও বংশানুক্রমিক ধারায় অন্য কল্পীয় পুজা দেখা যায়।

আশ্বিন মাসের শুক্লাষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভের পুজা হয়। বিল্ববৃক্ষ মূলে দুটি ঘট স্থাপন করা হয়। একটি কল্পারম্ভের অপরটি বোধনের। প্রাতঃকালে যে দিন ষষ্ঠী তিথি থাকবে সেদিন কল্পারম্ভের ঘটে দেবী ও শ্রীশ্রী চণ্ডীর বিশেষ পূজা করে সংকল্পানুসারে শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ শুরু করা হয়।

আমরা জানি যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন ও যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করে ছিলেন তিনিই দুর্গা। দুর্গা হল হিন্দু দেবী পার্বতীর এক উগ্ররূপ। হিন্দুরা ওনাকে মহাশক্তির একটি উগ্ররূপ বা জনপ্রিয় দেবী বলে মানেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *