আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ২৯ নভেম্বর: রাতের অন্ধকারে বাড়ি ফেরার পথে আচমকাই সামনেই পড়ে গিয়েছিল দুই বুনোহাতি। অবধারিত মৃত্যু ছিল। তবে প্রায় মৃত্যুর মুখে পড়েও সাহস না হারিয়ে শুধুমাত্র তাৎক্ষনিক বুদ্ধির জোরে রক্ষা পেল দুজন। বুনো হাতির চোখে বালি ছিটিয়ে দেওয়ায় এই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছেন কালচিনি ব্লকের বিজয় চম্প্রমারি(৫৮)। মূলত তাঁর বোনের উপস্থিত বুদ্ধির জেরে কোনো ক্রমে প্রাণে বাঁচেন। তবে বুনো দাঁতালের হানায় গুরুতর জখম হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জানা গেছে, ঘটনাটি শনিবার রাতের। ঘটনাস্থল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের দক্ষিণ সাঁতালি গ্রাম। নিজের বাড়ির থেকে প্রায় ১ কিমি দূরে বোনের বাড়িতে গিয়েছিলেন পেশায় কৃষক বিজয় চম্প্রমারি। রাতে বাড়ি ফেরার সময় বোনের বাড়ি থেকে বার হতেই একসাথে দুটি হাতির সম্মুখে পড়ে যান তিনি। একটি দাঁতাল হাতি তার সাইকেল শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। তাঁকেও পায়ে পিষে দেবার চেষ্টা করেছিল।গোটা ঘটনাটি ছিল বড়জোর ৫ মিনিটের। তার চিৎকার শুনেই বাড়ি থেকে ছুটে আসেন বোন অর্ক চম্প্রমারি।
দাদার মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও হাতের কাছে কিছু না পেয়ে রাস্তার ধারে থাকা বালি তুলে একটি হাতির চোখে ছুড়ে মারেন। আর তাতেই কাজ হাসিল। চোখে বালি ঢুকে যাওয়ায় নিমেষের মধ্যে হাতিও বেসামাল হয়ে যায়। এরপরই জোড়া হাতি অন্ধকারে জঙ্গলের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যায়। ভাই-বোনের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন অনান্য প্রতিবেশিরা। উদ্ধার করা হয় জখম বিজয়কে। অর্ক চম্প্রমারি বলেন, “তখন দাদাকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম আমি। কোনো উপায় না পেয়ে পথের ধারে জমে থাকা বালি-পাথর হাতিগুলোর দিকে ছুঁড়তে শুরু করি।তাতেই সাময়িক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে ওই দুই বুনো হাতি।প্রাণে বাঁচেন দাদা। এমন ঘটনা আমি কোনও দিন ভুলতে পারব না। মৃত্যুকে খুব কাজ থেকে দেখেছি শনিবার। দাদা রক্ষা পেয়েছে এর থেকে খুশির আর কিছু হতে পারে না আমার কাছে।”
স্থানীয়রা জানান, দুই হাতি পাল্টা তেড়ে না আসায় বড় বিপদ এড়ানো গেল। জানা গেছে, হাতির হানায় বিজয় চম্প্রমারির গলা, হাত ও কোমড়ে গুরুতর আঘাত লেগেছে।ঘটনার খবর পেয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীরা ওই জখম কৃষককে আলিপুরদুয়ারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করেছেন। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বনদপ্তর। বিজয়ের স্ত্রী বাসন্তী চম্প্রমারি জানিয়েছেন “বরাত জোর আর আমার ননদের উপস্থিত বুদ্ধি আর অসীম সাহসের জেরে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন আমার স্বামী।”