আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ২৯ ডিসেম্বর: “নতুন করে কাউকে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখানোর দরকার নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে দিন গানটা গেয়েছিলেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। সেদিনই কবিগুরু সোনার বাংলা রচনা করে গিয়েছিলেন। সোনার বাংলার সৃষ্টি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের”। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতিকে এভাবেই কটাক্ষ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে বোলপুর ডাকবাংলো সংলগ্ন মাঠ থেকে জামবুনি পর্যন্ত এক পদযাত্রায় হাঁটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে ছিল তিনটি সুসজ্জিত গাড়ি। তাতে রবীন্দ্রনাথের ছবি লাগানো। গাড়িতে চলছে রবীন্দ্র সঙ্গীত। এছাড়া বাউল, আদিবাসী নৃত্য ছিল পদযাত্রায়। পদযাত্রার শেষে জামবুনির মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখেন মমতা। বক্তব্যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, “কু-কথায় অ-কথায় যেভাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতনকে অসম্মানিত করা হচ্ছে। এমনকি অমর্ত্য সেন পর্যন্ত রেহাই পাননি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মের ৬০ বছর পরে তৈরি করেছিলেন বিশ্বভারতী। আর এই বিজেপির বহিরাগত নেতারা জানেই না বাংলার সংস্কৃতি কি। তাঁরা বলে গিয়েছেন শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন।”
নিজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমি তখন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে প্রথম সাংসদ হয়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাজীব গান্ধী। প্রধানমন্ত্রীরা সাধারণত বিশ্বভারতীর ‘উপাচার্য’ হয়ে থাকেন। আমি তখন বিশ্বভারতীর সদস্য। সে সময় রাজীব গান্ধীর সঙ্গে প্রথম বিশ্বভারতীতে এসেছিলাম। সে সময় রাজীব গান্ধী যুব সমাজের কাছে যথেষ্ট ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। ওইদিন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এক সঙ্গে খেতে বসেছিলাম। ছাত্রছাত্রীরা রাজীব গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জানতে চাইছি আমাদের আইকন কার মতো হওয়া উচিত’। সে সময় তিনি আমাকে দেখিয়ে বলেছিলেন উনার মতো। কেন বলেছিলেন জানেন, উনি জানতেন বাংলার মাটিটাকে আমরা খুব ভালোবাসি, বাংলার মানুষকে আমরা ভালোবাসি। আর এখন সেই বিশ্বভারতীর বুকে যখন দেখি প্রাচীর গেঁথে দেওয়া হয়, মানুষের হৃদয়টাকে কারাগারে বন্দি করা হয়। তখন আমি ভালোবাসি না। বলি বাঁধ ভেঙ্গে দাও বাঁধ ভেঙ্গে দাও, ভাঙ্গো। আমার ভালো লাগে না যখন দেখি বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে একটি জঘন্য ধর্মান্তবাদ চলছে। আমরা বিশ্বভারতীকে হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দেব না। বিশ্বভারতীতে এক ঘৃণ্য রাজনীতির আমদানি করা হয়েছে। সারা বাংলার বুকে এক ঘৃণ্য রাজনীতির আমদানি করা হয়েছে। সংকীর্ণ, ঘৃণ্য, বিদ্বেষ মূলক রাজনীতির আমদানি করা হয়েছে”।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রীদের বাংলা সফর নিয়েও কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাংলায় ওরা নির্বাচনের জন্য আসছে। আগে মনে ছিল না। খাচ্ছে ফাইভ স্টারের খাবার। আর দেখাচ্ছে আদিবাসী বাড়ির খাবার। আমাদের আদিবাসী, তপশিলি ভাইদের অপমান করার অধিকার তোমার নেই। এখানে এসে ফেক আর ভেক রাজনীতি করে যাচ্ছে। আর মানুষে মানুষে দাঙ্গা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। নির্বাচনে এলে ওরা টাকা দিতে শুরু করবে। টাকা দিলে নিয়ে নিন, কারণ এই টাকা জনগনের টাকা। আর ভোট বাক্সে বিজেপিকে বিদায় দিন। ঘৃণ্য, দাঙ্গার রাজনীতি বন্ধ করে দিন”।
কবিগুরুর জাতীয় সঙ্গীত, ‘জনগণ মন অধিনায়ক’ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, “আমি বলছি আগে স্পর্শ করে দেখাক। তারপর সঙ্গীত পরিবর্তন করবে। ওরা বাংলার মেরুদণ্ডকে ভাংবার জন্য অনেক রকম চক্রান্ত চালাচ্ছে। আপনারা রুখে দাঁড়ান। আপনারা এক পা জলে নামালে, আমরা এক গলা পর্যন্ত জলে নামতে পারব”।
বিজেপির নাম না করে রাজ্যের মানুষকে সতর্ক করে মমতা বলেন, “গ্রামে গ্রামে বহিরাগত লোক ঢুকিয়ে কানে কানে ওরা মন্ত্র দেওয়ার চেষ্টা করছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলছে। এরকম বহিরাগত লোক দেখলে থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আমাদের জানান”।
সব শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এরা বর্গীর মতো বাংলাকে দখল করতে আসছে। আগে মায়েরা বর্গীর গান গেয়ে বাচ্চাদের ঘুম পারাত। আবারও বর্গী আসছে। দস্যুদের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচান। ঘুমলে হবে না। জেগে উঠুন। ঘৃণ্য রাজনীতি থেকে বাংলাকে বাঁচান”।