আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ২৪ এপ্রিল: করোনা সংক্রমণের কারণে গোটা দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। আর এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন অংসগঠিত ক্ষেত্রের কর্মরত মানুষ ও তাঁদের পরিবার। ২০১৭ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে অসংগঠিত শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। করোনার করাল গ্রাসের চেয়েও সম্ভভব ক্ষুধা জনিত আতঙ্কে রয়েছেন এই অংশের বহু মানুষ।
করোনার গ্রাস থেকে দেশকে বাঁচাতে দেশব্যাপী চালু হওয়া লকডাউন স্তব্ধ করে দিয়েছে সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও। দেশবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরোতে। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া জণগণের কাছে এই পরিস্থিতিটা খুবই সংকটজনক। তাঁদের একটা বড়সড় অংশ সম্ভবত আগামী কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো খাদ্যসংকটের মতো বিশাল বিপদের মুখে পড়তে চলেছেন। এমতাবস্থায় এই ধরনের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন মেদিনীপুর শহরের মহতাবপুররের বাসিন্দা তরুণী শ্রাবস্তী মাইতি ও তাঁর বন্ধুরা। তাঁরা মেদিনীপুর শহরে প্রশাসনিক অনুমোদন নিয়ে কয়েকদিন আগে অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যর আবেদন জানিয়ে প্রচার শুরু করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল যাতে তাঁদের পরিচিতি বন্ধু বান্ধবও নেটিজেনের সাহায্যে গণ-অর্থসংগ্রহ করা। লক্ষ্য ছিল সংগৃহীত অর্থ এবং নিজেদের অনুদানের মধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও কিছু খাদ্যসামগ্রী দরিদ্র অসহায় মানুষের হাতে যাতে তুলে দেওয়া যায়।
অনলাইনে গণ-অর্থসংগ্রহকে পুঁজি করে শ্রাবস্তী মাইতি তাঁর কিছু বন্ধু সূতনূ দাস অধিকারী, জয়দীপ জানা, সুদীপ্ত বসু, শুভঙ্কর শেঠ, জিতেন্দ্র সিং, শুভজিৎ মন্ডল, গৌরব হাতি, সৌরভ পালদের সহায়তায় চাল, মুসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, সর্ষের তেল, মুড়ি, হলুদ গুঁড়ো, সয়াবিন, বিস্কুট, চিঁড়ে, নুন, সাবান, সাবান গুঁড়ো ইত্যাদি সহযোগে এক হাজার প্যাকেট তৈরি করে সার্ভের মধ্য দিয়ে মেদিনীপুরে শহরের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বিলি করেন। তাঁদের এই গোটা কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন মেদিনীপুর সদরের মহাকুমা শাসক তথা মেদিনীপুরের পৌর প্রশাসক দীননারায়ণ ঘোষ। শ্রাবস্তী মাইতি ও তার বন্ধুদের পক্ষ থেকে এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য জন্য মহাকুমা শাসক সহ সরকার, প্রশাসন এবং সমস্ত রাজনৈতিককে ধন্যবাদ জানান।
শ্রাবস্তী মাইতি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের এই ছোট্ট সহযোগিতা অসহায় পরিবারগুলিকে সুস্থ, সবল ও সুরক্ষিত থাকার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে এবং কঠিন পরিস্থিতিকে জয় করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করলে তাঁরা খুশি হবেন। শ্রাবস্তী ও তার বন্ধুরা স্পষ্ট করে দেন যে তারা কোনও এনজিও অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শী দল নয় তাঁরা কেবলই বন্ধুদের একটা গ্রূপ যাঁরা এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। শ্রাবস্তীরা মনে করেন বর্তমানে সময়ে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইনে এভাবে অপরিচিত বা স্বল্প-পরিচিতদের কাছ থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট অথবা অন্যান্য মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে মানুষের হয়ে কাজ করছেন তাঁদের সবার উচিৎ প্রশাসনিকস্তর থেকে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে কাজ করা। উল্লেখ্য শ্রাবস্তীরা ইতিমধ্যে বিগত কয়েক দিনের মধ্যে মেদিনীপুর শহরের মহতাবপুর, জুগনুতলা, ভুঁইঞা পাড়া, রেল কলনী, সেখপুরা, গোলাপী চক, বেনেপুকুর, কোতবাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক পরিবারের দোরগোড়ায় ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের পরের লক্ষ্য সদর ব্লকের গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা। তাঁরা ইতিমধ্যে এবিষয়ে সদর ব্লক প্রশাসনের কাছে অনুমতি নিয়ে রেখেছেন।