ডিএ’র দাবিতে ধর্মঘট পুরুলিয়ায়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতির গান্ধীগিরি

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১০ মার্চ: রাজ্যজুড়ে যেখানে ধর্মঘট জোর কদমে চললো সেখানে খানিকটা ব্যতিক্রম ছবি ধরা পড়ল পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ও ঝালদা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলগুলিতে।
অফিসের তালা খুলতে গান্ধীগিরি কৌশল অবলম্বন করলেন পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজীব লোচন সরেন।

আজ তিনি তাঁর অফিস বন্ধ থাকার খবর শুনে তড়িঘড়ি বান্দোয়ানের বাড়ি থেকে অফিসে আসেন। ততক্ষণে অফিসে তালা খুলতে না দিয়ে আন্দোলন জোর কদমে চলে ধর্মঘটিদের। শিক্ষক, শিক্ষা কর্মীরা সরকার বিরোধী স্লোগান তুলে সরব হন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে কাছে পেয়ে আরও জোরালো হয় আন্দোলন। পরিস্থিতি বুঝে শেষ পর্যন্ত নমস্কার করে ধর্মঘট পালনকারীদের কাছে অফিসের তালা খোলার আবেদন রাখেন। কৌশলী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সফল হন। অফিসে ঢুকে কর্ম সংস্কৃতি বজায় রাখার উদ্যোগ নেন তিনি। তবে, এই ক্ষেত্রে আংশিক সফল হন তিনি। মোট ২৫ জন কর্মীর অধিকাংশই উপস্থিত রয়েছেন বলে দাবি করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান। কিন্তু দুপুরে দেখা গিয়েছে কয়েকজন টেবিলে ছিলেন না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজীব লোচন সরেন বলেন, “অফিসের তালা বন্ধ রয়েছে খবর পেয়ে ধর্মঘটিদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করি। অনুনয় বিনয়ের সঙ্গে তাদের তালা খুলে অফিস চালানোর জন্য বলি। তারা আমার কথায় গুরুত্ব দিলেন। এই ক্ষেত্রে সাফল্য মিলেছে।”

ধর্মঘটেও ঝালদা পৌরসভা পরিচালিত চারটি প্রাথমিক স্কুল খোলা ছিল। ছিলেন শিক্ষকরা। উপস্থিত ছিল শিক্ষার্থীরা। ১ নম্বর ওয়ার্ডে আনন্দ বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২ ওয়ার্ডের হরিজন বিদ্যাপীঠ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নামোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝালদা হিন্দি হাই স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার কম থাকলেও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। পঠন পাঠনের পাশাপাশি মিড ডে মিলও হয় সেখানে। ঝালদা পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মধুমঙ্গল দাস ডিএ’র দাবির সমর্থন করে জানান, “আমাদের কাছে কোনো সংগঠন বা পৌরসভার কোনো নির্দেশিকা নেই যে স্কুল বন্ধ রাখতে হবে তাই স্কুল খোলা রয়েছে।”

ডিএ’র দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সাথে সাথে পুরুলিয়া জেলাতেও আন্দোলনে সামিল হলেন শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীরা। জেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি অফিস, আদালতে ধমর্ঘটে সামিল হয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে সরকারি কর্মচারীর বড় অংশ। প্রথম দিকে আন্দোলনের জেরে জেলা শিক্ষা দপ্তরের তালাই খুললো না পুরুলিয়ায়। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা ধর্মঘটের জেরে সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা পথে। সাত সকালেই শহরের জেলা স্কুলের গেটে ধর্মঘটের পোস্টার লাগিয়ে স্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনকারীরা। ফলে স্কুলে আসা শিক্ষক সহ ছাত্রদের ফিরে যেতে দেখা যায়। সকাল থেকেই বিভিন্ন সরকারি অফিসের গেটে পোস্টার লাগিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। সকাল ১০টার আগেই জেলা শিক্ষা ভবনে উপস্থিত হন যৌথ মঞ্চের সদস্যরা। ফলে শিক্ষা ভবনের তালা সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলা হয়নি। অফিসের সময় শুরু থেকেই জেলা আদালতের কর্মীরা জেলা আদালতের মূল গেটের সামনে বিক্ষোভ ও স্লোগান দিতে শুরু করে।

পুলিশ সকাল থেকেই সক্রিয় ছিল। বিভিন্ন দফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গেট খুলে দেয়। ইচ্ছুকদের অফিস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে যাতে কোনও বাধা না হয় সেই দিকে নজর ছিল পুলিশের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের বিশেষ টিম টহল দেয়। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকে নিজেদের দাবি দাওয়া ভিত্তিক ব্যানার পোস্টার হাতে নিয়ে পুরুলিয়া শহরে একটি মিছিল করেন তারা। পরে জেলাশাসকের দপ্তরের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন আন্দোলনকারীরা। বক্তব্য রাখেন নেতৃত্বরা। শাসক দল পন্থী কর্মী সংগঠনের বিরুদ্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন তাঁরা।

এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ল’ ইয়ারস ইউনিয়ন সংগঠন। জেলা সম্পাদক মানব মুখার্জির বক্তব্যে এই দাবি ন্যায় সংগত।

সকাল সাড়ে ন’টা থেকে জেলাশাসকের অফিসের মূল গেটে রাজ্যে কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা হাত জোড় করে অফিসে আসা কর্মীদের কাছে আবেদন করেন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকরা এই আন্দোলনে সামিল হওয়ায় প্রায় অধিকাংশ স্কুল বন্ধ রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা অ্যাডমিট কার্ড না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফেরে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক সুপ্রিয় দত্ত জানান, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ একটি খিচুড়ি সংগ্রাম কমিটি, বামপন্থীরা বরাবরই মিথ্যা কথা বলে এসেছেন, মা মাটি সরকার, মমতা ব্যানার্জির সরকার আমাদের সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যই খুশি রয়েছেন। এই সরকারকে অপদস্ত করার জন্য নানা রকম ফন্দি ফিকির করছে। সরকারি কর্মচারীরা ডিএ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে আছেন। আলাপ আলোচনা করেই সেই সমস্যার সমাধান করা হবে। এই সরকারের কিছু ভুল ত্রুটি রয়েছে, আমাদের সংগঠন আলোচনা করেই ভুল ত্রুটি কাটিয়ে এই সরকারকে এগিয়ে নেওয়া নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *