পথশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ টাকায় শুধু রাস্তায় তাপ্পি মারা যাবে, দাবি সুকান্ত মজুমদারের

আমাদের ভারত, ২৮ মার্চ: দুর্নীতি নিয়ে যুঝতে থাকা দলকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামের মানুষের কাছে যাওয়ার রাস্তা করে দিতে পথশ্রী প্রকল্প এনেছেন তৃণমূল নেত্রী বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। আর সিঙ্গুর আন্দোলনের হাত ধরেই বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী হবার পথ প্রশস্ত করেছিলেন তিনি। তাই সেই সিঙ্গুর থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের অন্যতম হাতিয়ার পথশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই প্রকল্পের সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতির দাবি, এই পথশ্রী প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তাতে ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় তাপ্পি মারা ছাড়া আর কিছুই হবার নয়।

রাজ্য জুড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন ও সংস্কার করা হবে নয়া পথশ্রী প্রকল্পের আওতায়। ৪ হাজার কোটি টাকায় এই কাজ হবে। সেই প্রকল্প আজ সিঙ্গুর থেকে উদ্বোধন করেন মু্খ্যমন্ত্রী। সিঙ্গুরের রতনপুর এলাকায় ইটের ওপর বালি সিমেন্ট লেপে রাস্তা তৈরির প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে সিঙ্গুর আন্দোলনের কথা ফের মনে করানোর চেষ্টা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, একদিন এখানে ধর্নায় বসে ছিলাম মনে আছে জমি রক্ষার দাবিতে। আন্দোলনের স্মৃতি উস্কে দিয়ে ফের মানুষের মধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মু্খ্যমন্ত্রী।

কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরকারের এই প্রকল্প নিয়ে খোঁচা দিয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ পথশ্রী কিংবা রাস্তার স্ত্রী যোজনার উদ্বোধন করলেন। এই যোজনা উদ্বোধন করার জন্য তিনি যে জায়গাটি বেছে নিয়েছেন সেটি হচ্ছে সিঙ্গুর। এই সিঙ্গুর আসলে শিল্প চেয়েছিল, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকরা চাষযোগ্য জমি ফেরত চেয়েছিল। কিন্তু কেউ কিছু পেলেন না। তার পরিবর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে গিয়ে রাস্তা তৈরি করছেন। অভিযোগে সুরে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় যদি যান তাহলে দেখবেন শুধুমাত্র ন্যাশনাল হাইওয়েগুলি বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকায় মানুষের সবচেয়ে বেশি কষ্টের কারণ হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় যে সমস্ত রাস্তা তৈরি হয়েছিল সেগুলি দেখভালের কোনও ব্যবস্থাই রাজ্য সরকার করেনি। সেই কারণেই দুরবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলার সাধারণ মানুষ। এরপরই তাঁর দাবি, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে বাজেট দিয়েছেন এই পথশ্রী বা রাস্তাশ্রী প্রকল্পের জন্য তাতে তাপ্পি মারা ছাড়া কোনও কিছুই হবে না।

এর আগে সুকান্ত মজুমদার, পথশ্রী প্রকল্প নিয়ে রাস্তা তৈরির কাজের জন্য কন্ট্রাক্টারদের সতর্ক করেছেন। তাঁর দাবি, রাজ্যের তৃণমূলের সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। ফলে কাজ করলেও পথশ্রী প্রকল্পের টাকা কিন্তু কন্ট্রাক্টাররা পাবেন না।

বিজেপি রাজ্য সভাপতির দাবি, সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে যে যে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সবটাই মিথ্যা ও ভাঁওতা। তাই এবারের এই পথশ্রী প্রকল্পও ব্যর্থ হবে। একই সঙ্গে তিনি কন্ট্রাক্টারদেরও এই প্রকল্পে যুক্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, “পথশ্রী প্রকল্পে যে কন্ট্রাক্টাররা রাস্তা তৈরি কাজে নামবেন তাঁরা কেউ পয়সা পাবেন না। রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার খালি, সরকার নিঃস্ব, ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা।” তিনি আরো বলেন, সিঙ্গুর গিয়ে সরষের বীজ ছড়িয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু সেখানে এখনো চাষ হয়নি। সিঙ্গুর থেকে তিনি যা যা করেছেন প্রত্যেকটা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সেইমতো পথশ্রীও
ফ্লপ হবে।

সতর্কতার সুরে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, “যারা টেন্ডারে অংশগ্রহণ করবেন তাঁরা পয়সা পাবে না। অলরেডি ১০০ দিনের কাজে যারা রাস্তা ব্রিজ তৈরি করেছেন তারা এখনো পয়সা পাননি, তাদের অবস্থা খারাপ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *