বাঁকুড়া জেলাজুড়ে বালি ও পাথর সরবরাহ বন্ধ, থমকে নির্মাণ কাজ

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৪ জানুয়ারি: বালি ও পাথ‍র যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাঁকুড়া জেলাজুড়ে নির্মাণ কাজ ব্যাহত। একদিকে নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ অপরদিকে জেলার পাথর কল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এই অবস্থা তৈরী হয়েছে। এর ফলে নির্মাণ শিল্পে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রি ও দিনমজুরদের আয়ের পথও বন্ধ। কাজের অভাবে তারা বেকার।

বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ সীমানা হয়ে পূর্ব সীমান্ত জুড়ে রয়েছে দামোদর নদ। তেমনি জেলার ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শালি, শীলাবতী, কাঁসাই ভৈরববাঁকি সহ অসংখ্য ছোট নদ নদী। আপাতদৃষ্টিতে বাঁকুড়া জেলা নদী মাতৃক হলেও নদ নদী গুলিতে বর্ষার পর জল থাকে না বললেই চলে। যার ফলে বাঁকুড়া জেলা খরাপ্রবনই রয়ে গেছে। তবে নদী মাতৃক বাঁকুড়া সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা না হলেও জেলার নদ নদী গুলির বালি অর্থনৈতিক ভাবে জেলাকে সমৃদ্ধ করেছে।কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই নদীর বালি এখন জেলাবাসীর কাছে দুষ্প্রাপ্য বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেশ কিছুদিন নদী গুলি বালি মাফিয়াদের কবজায় চলে যায়, তারা এই বালি হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, মেদিনীপুরের মত জেলায় পাচার করে মোটা টাকা কামাচ্ছিল। যা রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে যায়। সরকার এ বিষয়ে কঠোর মনোভাব নেওয়ায় সেই দৌরাত্ম্য কমলেও সরকারি দরপত্র ডাকার যাঁতাকলে পড়ে বালির ঘাট গুলি প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে নদী থেকে বালি না ওঠায় নির্মাণ কাজ থমকে গেছে। নির্মাণ কাজ নির্ভর করে নদীর বালি এবং শালতোড়ার পাথর শিল্পের উপর। দীর্ঘ ৩ বছর হল সরকারি লাল ফিতের ফাঁসে শালতোড়া মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাঁটির প্রায় ২০০ পাথর কল বন্ধ। দ্বিগুণের বেশি দাম দিয়ে পাথর কুচি আমদানি হচ্ছে বীরভূমের রামপুরহাট, পাচামি থেকে। বাঁকুড়ার ক্রাশার মালিকরা এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছেন।

জেলা জুড়ে বিভিন্ন নদী ঘাট যেমন শালতোড়া থেকে মেজিয়ায় প্রচুর বালি ঘাট ছিল। সরকার স্বল্প মেয়াদী লিজে এই বালি ঘাটগুলি তুলে দিয়ে রাজস্ব পূর্ণ করতো। এক দামোদর নদেই প্রায় ২০-২৫ টি বালি ঘাট ছিল। এখন বালিঘাট গুলি বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে নির্মাণ কাজের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘর তৈরিতেও। এমনকি বালি আর পাথরের দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্যের জন্য আবাস যোজনায় গরিব মানুষের বাড়ি তৈরিও করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে দু একটি বালি ঘাট ১৫- ২০ দিনের জন্য খুললেও বালির যা দাম নিচ্ছে ঘাট মালিকরা তা শুনে ভিরমি খেতে হচ্ছে। যেখানে ১০০ ঘনফুট বালির দাম হওয়া উচিত ৭০০ টাকা সেখানে বর্তমানে দাম পড়ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এই গরজের দাম দিয়ে ঢিমে তালে ঠিকা সংস্থা গুলি নির্মাণ কাজ চালু রাখলেও গত এক সপ্তাহ ধরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে অন্যান্য নির্মাণ কাজ। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরাও কিছু বলতে চাইছেন না যে কেন পাথর কল গুলি বন্ধ আর কেনই বা বালি ঘাটের দরপত্র ডাকা হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *