অর্থের লোভে রাজি হয়েও লোকলজ্জার ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে প্রতারণা গর্ভদাত্রী মায়ের!

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৫ ফেব্রুয়ারি: অর্থের লোভে গর্ভদাত্রী মা হতে রাজি হয়েও শেষে লোকলজ্জার ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে প্রতারণা। নিউ আলিপুর সারোগেসি কান্ডে পুলিশি জেরায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০ ফেব্রুয়ারি ধরা পড়ার পর জেরায় অভিযুক্ত জানান, সারোগেট হাউসে একা থাকার সময় তার মিসক্যারেজ হয়। তিনি ভ্রুণ ফেলে দেন নদীতে। যদিও তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

জানা গিয়েছে, পুলিশি জেরায় মুখে ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। জানান, তিনি অত্যন্ত গরিব বিধবা একজন মহিলা। না বুঝে এতগুলো টাকার লোভে এগ্রিমেন্ট সাইন করে দেন, এবং তিনি রাজি হয়ে যান। কিন্তু পরে শারীরিক পরিবর্তনের জেরে সামাজিক লজ্জায় ভয় পেয়ে বসে। সমাজ ও প্রতিবেশীদের কি জবাব দেবেন সেই ভেবেই ক্রমশ ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তখনই সিদ্ধান্ত নেন গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট করার। এর পরেই ডায়মন্ড হারবারের হাসপাতালে গিয়ে মৃত শিশুর জন্ম দেন ওই মহিলা। অন্যদিকে টাকা এবং হবু সন্তানকে হারিয়ে কার্যত ভেঙে পড়েছেন নিউ আলিপুরের সেই দম্পতি।

পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত জেরায় জানিয়েছেন সারোগেট হাউসে একা থাকার সময় তার মিসক্যারেজ হয় এবং তিনি ভ্রুণটি নদীতে ফেলে দেন। কিন্তু এই কথায় যথেষ্ট সন্দেহ হয় পুলিশের। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে সারোগেট মা একটি আলাদা ফোন ব্যবহার করতেন। যার নম্বর জানতেন না ওই নিউ আলিপুরের দম্পতি। পুলিশ ওই ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে দেখে চলতি মাসের ওই ফোন ছিল মন্দির বাজার এলাকায়। এবং ১৭ থেকে ১৯ তারিখ রাতে ফোনের টাওয়ার লোকেশন ছিল ডায়মন্ড হারবারে। এরপর ওই দুই জায়গার সমস্ত নার্সিংহোম ও হাসপাতালে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু সেই সময় ওই নামে কেউ ওখানকার হাসপাতালে ভর্তি হয়নি বলে জানায় হাসপাতাল ও নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষরা।

প্রেমিকের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা যায় সারোগেট মায়ের টাওয়ার লোকেশনের সঙ্গে ওই প্রেমিকের টাওয়ার লোকেশন একই জায়গায় ছিল। এরপর ফের একবার ডায়মন্ড হারবারের সব নার্সিংহোম হাসপাতালে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তখনই পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত মহিলা নাম বদল করে ডায়মন্ড হারবারের এক সরকারি হাসপাতালে দুদিনের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। ওখানেই এক মৃত শিশুর জন্ম দেন ওই মহিলা। অভিযুক্তকে শনাক্ত করে সেই হাসপাতালে নার্স ও চিকিৎসকরা।

উল্লেখ্য, নিউ আলিপুরের এক নিঃসন্তান দম্পতি বছর খানেক আগে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর এলাকায় একটি সারোগেসি ক্লিনিকের সন্ধান পান। সেখানে যোগাযোগ করেন সন্তানের জন্য। তখন সেই ক্লিনিকের চিকিৎসকরা জানান, ওই দম্পতি সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নিতে পারবেন। এরপরেই ওই ক্লিনিকের চিকিৎসকদের মাধ্যমে এক গর্ভদাত্রী মায়ের সাথে আলাপ হয় তাঁদের। তাঁকে চিকিৎসকের কথা মত ৬ লক্ষ টাকা দেয় ওই দম্পতি। এরপরে বেশ নিয়মিত ওই মহিলা ও চিকিৎসকের সাথে দম্পতির যোগাযোগ থাকলেও কয়েক মাস পর থেকে যোগাযোগ করা বন্ধ করে পালিয়ে যায় গর্ভদাত্রী মা। ডেলিভারির সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সন্তান হাতে পাননি তাঁরা। এমনকি ওই চিকিৎসকেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপরেই ওই প্রতারিত দম্পত্তি নিউ আলিপুর থানায় গর্ভদাত্রী মা ও চিকিৎসক-সহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই গর্ভদাত্রী মাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *