কেরলে কুট্টি আর পশ্চিমবঙ্গে মুকুল, ২১–এর নির্বাচনে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ছক মোদী-শাহের

শ্রীরূপা চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ২৬ সেপ্টেম্বর: শনি বার সর্বভারতীয় কমিটি ঘোষণা করেছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। একুশের নির্বাচনের আগে সেই কমিটির সহ সভাপতির তালিকায় এসেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি নাম–একটি পশ্চিমবঙ্গের মুকুল রায়, দ্বিতীয়টি কেরলের আব্দুল্লা কুট্টি। এরা দুজনেই পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ শুধু নন, এরা পরিপক্ক ভোট রাজনীতির গুটি সাজাতেও।

এরা দুজনেই দুই রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের বহিস্কৃত নেতা। আর তাই এদের দিয়েই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পরিকল্পনা করেছেন মোদী- শাহ, বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

দুই রাজ্যেই ছয় মাস পরে ভোট। এরা দুজনেই দুই রাজ্যে বর্তমান শাসক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন একসময়ে। এখন সেখান থেকে বহিস্কৃত হলেও ক্ষমতায় থাকা দলের পুঁথি নক্ষত্র এদের হাতের মুঠোয়। যেমন মুকুল রায় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড। আর তৃণমূল ছাড়ার সময় তিনি দাবি করেছিলেন একবারে বুথ স্তর পর্যন্ত তাঁর লোক আছে। সম্ভবত সেই কারণেই তৃণমূলকে সমূলে উৎপাটন করতে মুকুলকে দায়িত্বে আনলেন মোদী শাহ।

দলের ভিতরে মুকুল ও তাঁর অনুগামীদের গুরুত্ব কমছে বলে শোনা গিয়েছিল মাঝখানে। কিন্তু ভোট ময়দানে যে মুকুল ম্যাজিক আছে তা লোকসভা নির্বাচনে বোঝা গিয়েছিল। ফলে এই পেয়াদাকে হাত ছাড়া করতে চায়নি পদ্মশিবিরের মাথারা। তৃণমূলের দুর্বল জায়গায় আঘাত করাই হোক বা ভোট রাজনীতির গুটি সাজানো হোক, মুকুলের ক্ষোভকে প্রশমিত করে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলায় বিজেপি নেতৃত্ব নিয়েছে এই সিদ্ধান্ত। যদিও রাজ্য বিজেপিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে মনোমালিন্য।

অন্যদিকে কেরলের আব্দুল্লা কুট্টিকেও সহ সভাপতি করা হয়েছে। সিপিএমের ছাত্রসংগঠন এসএফআই থেকে উত্থান এই আব্দুল্লা কুট্টির। পার্টির রাজ্য কমিটিতেও ছিলেন তিনি। কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অচ্যুতানন্দনের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন কুট্টি। এক সময় সিপিআইএম কেরলের কান্নুরকে পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব দিয়েছিল কুট্টির হাতে। ঠিক যেমন বাংলায় ২০০৪ দমদম পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী। কুট্টি মিরাকেল ঘটিয়ে প্রথম কান্নুর লোকসভা জিতেছিলেন। সিপিএমের নেতৃত্বে কুট্টি তারপর ২০০৪ সালে মার্জিন বাড়িয়ে নেন সেখানে। কিন্তু এই ভোটের রাজনীতি গুলে খাওয়া নেতার সঙ্গে দলের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে ২০০৬-এর মাঝামাঝি থেকে। ২০০৮ কুট্টিকে বহিষ্কার করে সিপিএম। তারপর কংগ্রেসের এসে ২০১১-য় ভোটে জিতে হন বিধায়ক। কিন্তু ১৬-র ভোটে প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে হারের মুখ দেখতে হয় তাঁকে। নিজেকে জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতা বলে গুজরাট মডেলের প্রশংসা করে অচিরেই চলে আসেন বিজেপির কাছে। গেরুয়া শিবির তাঁকে দলে নেয়। আর শনিবার পদ্মশিবির তাঁকে দলের সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি করে।

একদিকে সিপিআইএমের ভোট মেশিনারি জ্ঞান আর অন্যদিকে কিছুদিনের জন্য হলেও কংগ্রেসকে কাছ থেকে দেখা। এই দুই অভিজ্ঞতার মিশেলকে হাতিয়ার করছেন মোদী-শাহ। এখানেও সেই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার জন্য অর্থাৎ সিপিআইএম কে উৎখাত করতে বহিষ্কৃত সিপিআইএম নেতাকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে কাজ হাশিলের পরিকল্পনা মোদী শাহের বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

যদিও মোদী শাহের এই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার তত্ত্ব নতুন নয়। আসামে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, মধ্যপ্রদেশের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তারই উদাহরণ। তাই একুশের ভোটের আগে আবারও একবার সেই তত্ত্বেই দান চাললো পদ্মশিবির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *